ইন্দ্রাণী সেন এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন অদিতি মহসিনকে। প্রথম জনের গাওয়া শেষ, পরের জন শুরু করবেন। দুজনেই রবীন্দ্রনাথের গান করেন। তবে এ উৎসবে ইন্দ্রাণী গেয়েছেন নজরুলের গান। শ্যা মাসংগীত ‘মহাকালের কোলে এসে গৌরী হলো মহাকালী’ শেষ করে উষ্ণ আলিঙ্গন করে মঞ্চে পাঠান অদিতিকে। তিনি শুরু করেন ‘তোমায় গান শোনাব’ দিয়ে। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে কলকাতার নজরুল মঞ্চে শুরু হয় ‘বাংলা উৎসব ২০১৯’-এর দ্বিতীয় দিনের আয়োজন। এ যেন ছিল বাংলা গানের শিল্পীদের এক মহাপুনর্মিলনী।
বাংলাদেশ থেকে আসা ডলি মণ্ডল ধবধবে সাদা শাড়িতে যোগিনীর সাজে উঠেছিলেন মঞ্চে। নতুন প্রতিভা হিসেবে মঞ্চে উপস্থাপিত হয়েছেন তিনি, মোস্তাফিজুর রহমান, কলকাতার আকাশ ভট্টাচার্য ও অঙ্কিতা বসু। এত বড় মঞ্চে গাইতে বুকটা এতটুকু কাঁপেনি ডলির। বাংলা উৎসব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিল্পীদের মধ্যে। গান শুনিয়ে মন ভরছে না কারও কারও। কেননা, বিরাট মঞ্চ, বিরাট মিলনায়তন। দর্শকপূর্ণ না হলে কেমন শূন্যসতার অনুভূতি হয়। প্রথম দিন এ নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপ করেছেন অনুপম রায়। বাংলা উৎসবের অন্য তম নিবেদক বাংলাদেশের বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, যথাযথ প্রচারণার অভাবে কলকাতার বহু শ্রোতা এ উৎসবে যোগ দিতে পারেননি। এটি এখানকার ব্যভবস্থাপকদের ভয়াবহ ব্যির্থতা।
নজরুল মঞ্চের বাইরে এক টুকরো খোলা মাঠে পাতুরির স্টলে গতকাল মিলেছিল সরষেবাটা ইলিশ, শুঁটকি, হাঁসের মাংস ও পাতলা খিচুড়ি। ছোট্ট এক টুকরো ইলিশ কেন ২০০ টাকা? এক ভোজনরসিককে কৈফিয়ত দিতে গিয়ে বিক্রেতা বলেন, এখন মৌসুম নয়। ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
সকালে লোকগান করেন কলকাতার গৌতম দাস বাউল, সন্ধ্যায় বাংলাদেশের চন্দনা মজুমদার। অপেক্ষা কক্ষে আড্ডার ফাঁকে চন্দনা জানালেন, ‘সোনার পালঙ্ক’ গানটির অনুরোধ আছে। এ ছাড়া গাইবেন লালন, রাধারমণ দত্ত, শাহ আবদুল করিমের গান। লাইসা আহমদ লিসা শুনিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অতুলপ্রসাদ সেনের গান। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান শুনিয়েছেন ইন্দুবালা, আঙুরবালা ও কমলা ঝরিয়ার গান। আরও গান করেছেন জয়তী চক্রবর্তী, খায়রুল আনাম শাকিল, বুলবুল ইসলাম আর বাংলাদেশের ব্যা ন্ড চিরকুট। পরশু দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত শব্দযন্ত্র পরীক্ষা করেও তুষ্ট হতে পারেননি তাঁরা। ব্যা ন্ডের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমি জানালেন, ‘সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন বলে সাহস পাচ্ছি।’ তাঁদের শোনানোর কথা নিজেদের জনপ্রিয় ‘মরে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘দুনিয়া’, ‘কানামাছি’ গানগুলো। সব সময়ের মতো ‘ধনধান্যন পুষ্পভরা’ গেয়ে শুরু করে দলটি।
আজ রোববার শেষ হবে উৎসব। গান করবে কলকাতার ব্যা ন্ড চন্দ্রবিন্দু। রাগপ্রধান গান শোনাবেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। এ ছাড়া থাকবেন আরও বেশ কজন জনপ্রিয় শিল্পীর পরিবেশনা। বাংলা উৎসবে উপস্থাপক হিসেবে ঢাকা থেকে এসেছেন ত্রপা মজুমদার ও কৌশিক শংকর দাস।
এ ছাড়া আছেন কলকাতার দুই উপস্থাপক দেবাশীষ বসু ও মধুমিতা বসু।