চেতনা চত্বরে লাল-সবুজের ভিড়
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বর আজ সেজেছে লাল আর সবুজে। বর্ণিল মঞ্চ, তোরণ আর ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। আরও ছিল সাত বীরশ্রেষ্ঠর সাতটি স্তম্ভ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ রোববার এখানে আয়োজন করা হয় ‘আনোয়ার সিমেন্ট-চ্যানেল আই বিজয় মেলা ২০১৮’। লাল আর সবুজ রঙের বেলুন উড়িয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এই বিজয় মেলার উদ্বোধন করেন যুদ্ধাহত ও খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য, চ্যানেল আইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
মেলা প্রাঙ্গণে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ছবি এঁকেছেন। ছিল চিত্রশিল্পী মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিজয় দিবসের চিত্রাঙ্কন পর্ব। আরও ছিল নানা সামগ্রীতে সজ্জিত স্টল।
নাট্যজন আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি বিজয় দেখেছি এবং আজও দেখছি। আমি খুবই ভাগ্যবান। আমরা যখন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসন দ্বারা নিষ্পেষিত, তখন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরম্পরায় এক মহামানব এলেন। তিনি জাতিকে নিয়ে গেলেন হিমালয়ের শিখরে। তাঁর নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেলাম। তাঁর নেতৃত্বের প্রখরতা দেখলাম স্বচক্ষে। কিন্তু তারপর আবার শকুন পড়ল এই বাংলায়। হায়েনার চোখ পড়ল। শক্ত হাতে তা দমন করলেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা। আমরা দেখছি তাঁর নেতৃত্বের প্রবলতা। সামনেও বিজয় দেখছি।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সেই সময় সারা দেশের মানুষের মধ্যে এক অভূতপূর্ব প্রেরণার সৃষ্টি করেছিল। যাঁরা যুদ্ধে গিয়েছিলেন, তাঁদের যেমন প্রেরণা জুগিয়েছে, এমনকি যাঁরা গৃহ অভ্যন্তরে ছিলেন, তাঁদেরও। সেই প্রেরণা এত দিনে অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। আশা করব, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় আমরা আবার সবাই দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত হতে পারব।’
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘এ বছর বিজয় দিবস সময়ের কারণেই একটু ভিন্ন এবং অর্থবহ। এ বছর জাতীয় নির্বাচনে যে সরকার আসবে, সেই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে দেশের অব্যাহত উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সেই সরকারের অধীনেই আমরা পালন করব বিজয়ের পঞ্চাশ বছর, সুবর্ণজয়ন্তী।’
ইমপ্রেস গ্রুপ ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘বিজয়ের এই ৪৭ বছর অনেক ঘাত–প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে পার হয়ে এসেছি। এই দেশ আমাদের অনেক দিয়েছে। অনেক কিছু পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। দেশকে ভালোবেসে, প্রকৃতিকে ভালোবেসে এগিয়ে যেতে হবে। যে নির্বাচন আসছে, তার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সরকার পাব, এ আশা নিয়ে সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ইমপ্রেস গ্রুপের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন বলেন, ‘আমরা সেই জাতি, যারা যুদ্ধে জিতে আত্মসমর্পণ করিয়ে আমাদের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে পেরেছি। আজ সেই দিন। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই মাটি পেয়েছি, আজ তাঁদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।’
মেলায় সংগীত পরিবেশন করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধারা। আরও ছিলেন খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ ও খুদে গানরাজ। ছিল চ্যানেল আই সেরা নাচিয়েদের নাচ। এখানে দেশের গান পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অরূপ রতন চৌধুরী, ফকির আলমগীর, ফরিদা পারভিন, নীলু বিল্লাহ, দিনাত জাহান মুন্নি, অণিমা রায়, কোনাল, সুর বিহার ও সুরের ধারার শিল্পীরা। গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশির সুরে ছিল দেশের গান। রেজানুর রহমানের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘পোস্ট মাস্টার’ মঞ্চস্থ হয়। আবৃত্তি করেছেন মাহিদুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করেছেন মেলায় আগত বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার বিশিষ্টজনেরা।
‘আনোয়ার সিমেন্ট-চ্যানেল আই বিজয় মেলা ২০১৮’ পরিচালনা করছেন আমীরুল ইসলাম ও শহিদুল আলম সাচ্চু। এই বিজয় মেলা সরাসরি সম্প্রচার করেছে চ্যানেল আই।