'সম্মান যদিও কিছুটা পায়, সম্মানী পায় না'
গান শুনতে কে না ভালোবাসে? তবে সেটা বিনা মূল্যে। ডাউনলোড করে, টেলিভিশনে বা মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে। শিল্পী রয়্যালটি পান না, তবু কিছু সম্মান তাঁর কপালে জোটে। কিন্তু একটি গানের পেছনের বাকি মানুষেরা? গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালকের ভাগে কী থাকে? দুঃখ করে সে কথাই বলছিলেন সুরকার ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলী, ‘শিল্পীরা কী পায়? সম্মান যদিও কিছুটা পায়, সম্মানী পায় না।’
সংগীত সৃষ্টির পেছনে থাকেন গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী। শ্রোতাদের কাছে কেবল পরিচিত পান শিল্পী। বেশির ভাগ সমাদর কেবল তাঁরাই পান। এ বছর ঘটল এক ব্যতিক্রম ঘটনা। সম্মাননা জানানো হলো বহু জনপ্রিয় বাংলা গানের গুণী সুরকার ওস্তাদ আলাউদ্দীন আলীকে। ২০০৪ সাল থেকে গুণী শিল্পীদের সম্মাননা জানিয়ে আসছে সিটি ব্যাংক এনএ। এ বছর প্রথমবারের মতো একজন সুরকারকে সম্মাননা জানাল প্রতিষ্ঠানটি।
রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিটি ব্যাংক এনএ আয়োজন করে ‘গানে গানে গুণীজন সংবর্ধনা’। এ অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সুরকার আলাউদ্দীন আলীকে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। তিনি বলেন, ‘টেলিভিশন শুরু হওয়ার পর একটা ছোট্ট ছেলে এসেছিল আমার কাছে। খুব সুন্দর সুর করত সে। তাঁকে সুরকারের কাজ দিয়েছিলাম। কিন্তু টেলিভিশনের নামকরা যন্ত্রশিল্পীরা তার নির্দেশনায় কাজ করতে চাইছিল না। কিন্তু পরে তার সুর শুনে ওই শিল্পীরাও অবাক হয়ে যায়। সে আজকের এই আলাউদ্দীন আলী। “ও আমার বাংলা মা তোর”-এর মতো গান সে সুর করেছিল। গান অনেকেই শোনে, কিন্তু সমাদর করে না। সিটি ব্যাংক এনএ যে সমাদর করছে, তাদের ধন্যবাদ।’
অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘বিটিভির সময়কালে আলাউদ্দীন আলী তাঁর যেসব সৃষ্টি উপহার দিয়েছেন, সেগুলো অনন্য। পৃথিবী তাঁকে মনে রাখবে।’
সংবর্ধিত আলাউদ্দীন আলী বলেন, ‘বাংলা গানের এক অন্য রকম আবেদন আছে। আমি তাতে খানিকটা অবদান রাখার চেষ্টা করেছি মাত্র। বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল বলেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আজ সিটি ব্যাংক এনএ যে সম্মান জানাল, সেটা সব শিল্পীকেই জানানো উচিত। ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যায়, অথচ শিল্পীদের সহায়তা করা হয় না। কাউকে কাউকে অসুস্থতার সময় চিকিৎসা সহায়তা করা হয়। সেটাও সবার ভাগ্যে জোটে না। আজ তারা সম্মান ও সম্মানী দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক, সম্মাননা চেক ও গোলাম ফারুক বাবুর আঁকা সুরকারের একটি পোর্টেট।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী। নিজেদের সোনালি সময়কে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সত্তরের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন আমজাদ হোসেন। নির্মাণ করেছিলেন গ্রামীণ পটভূমির বাংলা চলচ্চিত্র। সেগুলোকে সুরে সুরে তুলে ধরত আলী। এভাবেই সংগীতে নতুন ধারার সৃষ্টি করেছিল সে।’ আলাউদ্দীন আলীর অনুরোধে সৈয়দ আবদুল হাদী অনুষ্ঠানের উপস্থিত অতিথিদের গেয়ে শোনান ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না’, ‘চোখের নজর এমনি করে’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসত’ গানগুলো। অনুষ্ঠানে আরও গান করেন ফারজানা আলী ও সুজন আরিফ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংক এনএর পরিচালক এবং করপোরেট ও বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান শামস জামান। এ ছাড়া শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন সিটি ব্যাংক এনএর কান্ট্রি অফিসার এন রাজাশেখর। ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর সংগীত অঙ্গনের একজন গুণী শিল্পীকে সংবর্ধনা দিয়ে আসছে এ প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি সম্মাননা জানিয়েছিল শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদকে।