পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন তিনি
রাষ্ট্র তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিল অনেক দেরিতে। অভিমান করে গত বছর ভারত সরকারের দেওয়া ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা নেননি ওস্তাদ ইমরাত খান। গত বৃহস্পতিবার পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের এই সাধক, সেতার ও সুরবাহারশিল্পী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
কিংবদন্তি ওস্তাদ এনায়েত খানের ছোট ছেলে ও ওস্তাদ বিলায়েত খানের ছোট ভাই ওস্তাদ ইমরাত খান বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন। তাঁর ছেলে সেতারশিল্পী নিশাত খান জানিয়েছেন, ইমরাত খান অসুস্থ ছিলেন। গত বছর তাঁকে ভারতের সম্মানসূচক রাষ্ট্রীয় পদক ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। জানিয়েছিলেন, ৮২ বছর বয়সে তিনি এ পদক কেন নেবেন? তাঁর থেকেও কম বয়সীদের আরও বড় সম্মাননা দেওয়া হয়ে গেছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ওস্তাদ ইমরাত খান। নিশাত খান জানান, কয়েক মাস ধরেই তাঁর বাবার শরীর ভালো যাচ্ছিল না। মৃত্যুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই তিনি হাসপাতালে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়।
আজ শনিবার ওস্তাদ ইমরাত খানের দাফন সম্পন্ন হবে।
ইমরাত খানদের আদি নিবাস ছিল ভারতের আগ্রায়। পরে তাঁর বাবা ওস্তাদ এনায়েত খান কলকাতায় চলে আসেন। ইমরাত খান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। দাদা ইমদাদ খানের ঘরানার শিল্পী ছিলেন তিনি। বিশ্বসংগীত অঙ্গনে সুরবাহার বা বেজ সেতারকে পরিচিত করানোর জন্য তাঁদের পরিবারের অবদান রয়েছে। সেতার ও সুরবাহার বাজিয়ে বিশ্বের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেতারে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেছিলেন এই শিল্পী।
নিশাত খান জানান, ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা পেয়েছেন জানার পর বাবার মন ভেঙে গিয়েছিল। শাস্ত্রীয় সংগীতে তাঁর অবদান রাষ্ট্র এত দিন আমলে নেয়নি, এটা মেনে নেওয়া যায় না। গত বছর তাই সেই সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।’ নিশাত আরও বলেন, ‘বাবাই আমার গুরু, শিক্ষক। তিনি একজন মহান দার্শনিক এবং শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রচারক ছিলেন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন তিনি। তাঁর জীবনের একটিই দুঃখ, সংগীতে তাঁর অবদানের কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তিনি পেলেন না; যেখানে তাঁর শিষ্য ও তাঁর থেকে কম বয়সীরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে।’
গত বছর ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যানের পর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরাত খান বলেছিলেন, এ সম্মাননা কোনো গৌরবের ব্যাপার নয়, এটা একজন মানুষকে তাঁর অবদানের জন্য দেওয়া রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অসময়ে স্বীকৃতি গ্রহণ করা আপস করার মতোই।