একটি দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সিনেমা বড় ভূমিকা রাখে। সিনেমার মাধ্যমে আমরা ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ মানুষদের কর্মকাণ্ড দেখতে পাই। বুঝতে পারি সমাজ ও দেশের জন্য কোনটা মঙ্গল আর কোনটা অমঙ্গল। সিনেমা দেখে দর্শক ভালো জিনিসগুলো শিখতে পারে। সেটা হলিউডের ‘স্পাইডারম্যান’ হোক বা শাকিব খানের ছবি। সিনেমার মাধ্যমে তরুণদের সামনে ছুড়ে দেওয়া হয় প্রশ্ন—তুমি নায়ক হবে, নাকি ভিলেন?
কোনো তরুণই ভিলেন হতে চায় না। সব তরুণের মনের ভেতর একজন ‘নায়ক’ থাকে। সে পরিবার আর সমাজের জন্য অবদান রাখতে চায়। সে চায় একটা মিষ্টি প্রেমময় জীবন। সিনেমা একজন তরুণকে ভালোবাসতে শেখায়। সুতরাং যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের ভালো সিনেমা দরকার। আমাদের তরুণদের বিনোদনের সুযোগ কমে আসছে। আমাদের প্রতি সপ্তাহে একাধিক ভালো সিনেমা মুক্তি পাওয়া দরকার। এ ছাড়া পারিবারিক বন্ধন টিকিয়ে রাখার জন্য সিনেমা জরুরি। পারিবারিক বন্ধন ঠিক থাকলে সন্তানেরা বিপথে যাবে না।
আমি সব সময় বলে এসেছি, আমি ভালো কাজ করতে চাই। ভালো কাজে সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই। আমি একটা ভালো সিনেমাশিল্প গড়ে তুলতে চাই। সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এই অঙ্গনের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সেটা করা সম্ভব। যদি সবাই এক হই তাহলেই সেটা করা যাবে। মানুষই তো শিল্প গড়ে।
আমাদের এই অঙ্গনের উন্নয়নের জন্য সরকারের ভূমিকা রয়েছে। তাদের বুঝতে হবে, কে কাজের লোক। কাজের লোকদের প্রাধান্য দিতে হবে, কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে, পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়াতে হবে। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, দেশের সবগুলো জেলায় মাল্টিপ্লেক্স করে দিন। প্রয়োজনে এ কাজটিকে নির্বাচনী ইশতেহারে নিয়ে আসুন। এটা করতে পারলে যুবসমাজ নেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।
অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে আমাদের চলবে না। তবে অতীত থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। পূর্বপুরুষ যদি আমাদের টিনের ঘর তৈরি করে দিয়ে যান, সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হবে। বাংলা চলচ্চিত্রে সেই অবস্থা তৈরির জন্য সব পক্ষের সহায়তা দরকার। যাঁরা কাজের মানুষ, তাঁরা সব সময় কাজের মানুষদেরই সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। যাঁরা কাজ করেন না, তাঁরা কখনোই কাজের লোকদের পছন্দ করেন না। এটা শুধু চলচ্চিত্র নয়, সব অঙ্গনের জন্য সত্য। সে জন্য কাজের লোককে মূল্যায়ন করতে হবে, তাঁর প্রশংসা করতে হবে। আমি আমার কাজের জন্য সব সময়ই প্রশংসা ও সমর্থন পাই। অতীতে যত বিপদ-আপদ হয়েছে, সব সময় সেই প্রমাণ পেয়েছি। নায়করাজ রাজ্জাক, বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান সব সময় আমাকে ভালো পরামর্শ দিয়েছেন, প্রশংসা করেছেন। এটা আমার কাছে অনেক কিছু। একটা কথা আছে, যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না। সুতরাং গুণীজনদের প্রতি যত্নবান হতে হবে। সুতরাং ভালো কাজ করার নিরাপত্তা দিতে হবে। বাকিটা আমরাই করে নেব।
হলিউড ও বলিউডের একধরনের প্রতিযোগিতা আছে। আমার প্রত্যাশা ভবিষ্যতে হলিউড-বলিউডের সঙ্গে আমাদের ঢালিউডও সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। আমাদের ছবি এখন দেশের বাইরে মুক্তি পাচ্ছে। ২০ বছর পর দেখা যাবে, একযোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সিনেমা মুক্তি পাবে। আগামী পাঁচ বছর আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক দূর এগিয়ে যাব।
যেসব দেশে বেশি বেশি সিনেমা হয়, শুনেছি সেসব দেশের তরুণদের মধ্যে মাদক সেবন ও অপরাধপ্রবণতা কম। যে দেশে বেশি সিনেমা হয়, সে দেশে হাজার হাজার ইয়াবা ধরা পড়ার খবর শোনা যায় না। আমার মনে হয়, প্রচুর সিনেমা তৈরি হলে মাদকাসক্তের হার কমে যাবে।