পর্দায় 'রাকেশ শর্মা' শাহরুখ খান
অনেক দিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল, ভারতের প্রথম নভোচারী রাকেশ শর্মাকে নিয়ে যে বায়োপিক তৈরি হবে, তাতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করবেন আমির খান। আর ছবির নামও নাকি পাল্টে যাচ্ছে। ‘স্যালুট’ নয়, এবার ছবির নাম হবে ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’। এবার তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিশ্চিত করেছেন ছবির অন্যতম প্রযোজক রনি স্ক্রুওয়ালা। এই সংবাদমাধ্যম থেকে প্রশ্ন করা হয়, শাহরুখ খান কি এই ছবিতে অভিনয় করছেন? তিনি বলেছেন, ‘হ্যাঁ।’ আরও শোনা যাচ্ছে, এই ছবিতে শাহরুখ খানকে নেওয়ার জন্য আমির খান নিজেই অনুরোধ করেছেন। কারণ, তিনি নতুন প্রকল্প ‘মহাভারত’ নিয়ে ক্রমেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পর্দায় বাস্তব রূপ দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। আর শাহরুখ খানের নতুন ছবি ‘জিরো’ মুক্তি পাবে এ বছর ২১ ডিসেম্বর।
ছবির পরিচালক মহেশ মাথাই। ছবির আরেকজন প্রযোজক সিদ্ধার্থ রায় কাপুর। রনি স্ক্রুওয়ালা আরও জানিয়েছেন, ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’ ছবির চিত্রনাট্য অনেক আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। ছবির শুটিং শুরু হবে আগামী বছর। তার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
গোড়াতে শোনা গিয়েছিল, এই ছবিতে যে নারী চরিত্রটি আছে, তাতে অভিনয় করবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য আমাকে বলা হয়েছিল। তখন শুনেছিলাম ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন আমির খান। ছবির শুটিং হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে। আমির খানের পর আর কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা জানি না।’ কিন্তু এবার জানা গেছে, ছবিতে শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয় করবেন ভূমি পেডনেকর।
১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল একটি সোভিয়েত মহাকাশযানে রুশ নভোচারী ইউরি মেলিশেভ (৪২) আর গেনাডি স্টেকালভের (৪৩) সঙ্গে সোভিয়েত রিপাবলিক অব কাজাখস্তানের একটি স্পেস পোর্ট থেকে মহাকাশ অভিমুখে যাত্রা করেন রাকেশ শর্মা। তিনি ছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন বৈমানিক।
সুমিত রায়ের ‘রাকেশ শর্মা: একজন অনভিলাষী মহাকাশ নায়ক’ নিবন্ধ থেকে জানা যায়, রাকেশ শর্মা ২১ বছর বয়সে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। ওই সময় থেকেই সুপারসনিক জেট বিমান চালানো শুরু করেন। পরের বছর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনি ২১টি মিশনে অংশ নেন। ২৫ বছর বয়সে তিনি টেস্ট পাইলট হন। মহাশূন্যে তিনি ভ্রমণ করেন ৩৫ বছর বয়সে। মহাশূন্যে গমনকারীদের মধ্যে বিশ্বে তিনি ছিলেন ১২৮তম আর ভারতের প্রথম ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘এ রকম দুর্ধর্ষ অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আগেও অনেক এসেছিল। তাই যখন আমার কাছে মহাশূন্যে যাওয়ার প্রস্তাব আসে, একবাক্যে রাজি হয়ে যাই। আমার কাছে এটা এতটাই সহজ ছিল।’
মহাকাশ অভিযানের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রাকেশ শর্মা বলেছেন, ৫০ জন পাইলটের মধ্য থেকে তাঁকে বাছাই করা হয়। তাঁকে অনেকগুলো কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। যেমন: বেঙ্গালুরুর অ্যারোস্পেস ফ্যাসিলিটিতে বিমানবাহিনী কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা থাকা একটি ঘরে তাঁকে ৭২ ঘণ্টা আটকে রাখে, আর এর মধ্য দিয়ে তাঁর মধ্যে সুপ্ত ‘একাকিত্ব ভীতি’ আছে কি না, তার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সবশেষে দুজনকে নির্বাচিত করা হয়, চূড়ান্ত প্রশিক্ষণের জন্য তাঁদের রাশিয়ায় পাঠানো হয়। তাঁদের একজন রাকেশ শর্মা, অন্যজন রবীশ মালহোত্রা। মহাকাশে যাত্রার এক বছর আগে তাঁরা মস্কো থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে স্টার সিটিতে যান। এই স্টার সিটি হলো একটি হাইসিকিউরিটি কসমোনট ট্রেইনিং ফ্যাসিলিটি, সেখানে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
রাকেশ শর্মা জানান, মস্কোতে তখন ছিল প্রচণ্ড ঠান্ডা। তুষারের মধ্যে এক ভবন থেকে অন্য ভবনে হেঁটে যেতে হতো। পুরো প্রশিক্ষণ ছিল রুশ ভাষায়, তাই তাঁকে রুশ ভাষা শিখতে হয়েছিল। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা তিনি রুশ ভাষা শিখতেন। খুব যত্ন করে তাঁর খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা হতো। প্রতিদিন তিনি ৩,২০০ ক্যালরি গ্রহণ করতেন। অলিম্পিক গেমসের প্রশিক্ষকেরা তাঁর শক্তি, গতি, সহনশীলতা এবং কঠিন অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে তাঁর বুক কীভাবে উঠে দাঁড়াত, তা পরীক্ষা করতেন। প্রশিক্ষণের পর জানতে পারেন, তাঁকেই নির্বাচন করা হয়েছে, আর রবীশ মালহোত্রা বিকল্প হিসেবে কাজ করবেন।
রাকেশ শর্মা ও তাঁর সঙ্গে থাকা মহাকাশচারীরা মহাকাশে প্রায় আট ঘণ্টা সময় কাটান। গ্রেইনি টিভি তা সরাসরি সম্প্রচার করে। তাতে দেখা যায়, ধূসর জাম্পস্যুটে তাঁরা তিনজন ‘স্যালুট ৭’ স্পেস স্টেশনের চারপাশে ভাসছেন আর গবেষণা পরিচালনা করছেন। মহাশূন্যে রাকেশ শর্মা যোগব্যায়াম অনুশীলন করেন। মহাকাশ থেকে ফিরে আসার পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে প্রশ্ন করেন, মহাকাশ থেকে ভারতকে দেখতে কেমন লেগেছে? জবাবে রাকেশ শর্মা বলেছিলেন, ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা’।