সুভাষ ঘাই ধর্ষক!
‘#মিটু’ অভিযান ধীরে ধীরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। এই আন্দোলনের জেরে বলিউডের একের পর এক পুরুষের কালো বীভৎস অতীতগুলো প্রকাশ্যে আসছে। আজ নারী প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। নিজের জীবনের চরম লজ্জার সেই ঘটনার কথা তাঁরা জনসমক্ষে বলতে কুণ্ঠাবোধ করছেন না। এই নির্যাতিত নারীদের সাহসী করে তোলার নেপথ্যের নামটি হলো ‘তনুশ্রী দত্ত’। তিনি শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন। ‘#মিটু’ আন্দোলনে এবার ফাঁস হলো বরেণ্য পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের এক কালো অতীত। প্রবীণ এই পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে সুভাষ ঘাই পুরো বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
জানা গেছে, নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলিউডের জনপ্রিয় এই চিত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। ওই নারীর অভিযোগ, সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে কাজ করার সময় তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটির পানীয়তে নেশার দ্রব্য মিশিয়ে তাঁকে অচেতন করা হয়। এরপর অচেতন অবস্থায় তাঁকে ধর্ষণ করেন বলিউডের এই পরিচালক। মেয়েটির বক্তব্য, সুভাষ তাঁকে মিউজিক রেকর্ডিংয়ে নিয়ে যান। সেখানে আরও পুরুষ সদস্য ছিলেন। রেকর্ডিংয়ের পরে এই পরিচালক মেয়েটিকে তাঁর বাসায় নামিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এরপর সুভাষ ঘাই মেয়েটির ঊরুতে হাত দিয়ে সজোরে জড়িয়ে ধরেন।
নারীটি বলেছেন, সুভাষ ঘাই তাঁর লোখান্ডওয়ালার অ্যাপার্টমেন্টে তাঁকে প্রায়ই চিত্রনাট্য শোনাতে ডাকতেন। সুভাষের এই বাসায় স্ত্রী থাকতেন না। আর এই বাসার তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘থিংকিং প্যাড’। মেয়েটি তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘একদিন চিত্রনাট্য শোনানোর সময় সুভাষ বলেন, তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা ভুল বোঝা হয়। আর আমি একমাত্র, যাঁকে তিনি ভালোবাসেন। এসব কথা বলে আমার কোলে তাঁর মাথা রাখেন। আমি যেই উঠে দাঁড়াই, সুভাষ আমাকে জোর করে চুম্বন করেন। আমি হতভম্ব হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যাই।’
মেয়েটির আর্থিক পরিস্থিতি সে রকম ছিল না। আর হাতে অন্য কোনো কাজ ছিল না। তাই এই ঘটনার পরও তিনি চাকরিটা ছাড়ার সাহস পাননি। মেয়েটি সেই ভয়ংকর দিনের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এক সন্ধ্যায় মিউজিক সেশনের পর আমাকে পানীয় পান করার প্রস্তাব দেন সুভাষ। পানীয়র মধ্যে নেশার দ্রব্য মেশানো ছিল। এরপর আমাকে তিনি আমার বাসায় না নিয়ে গিয়ে সোজা হোটেল কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তিনি আমার জিনসের প্যান্ট খুলে দেন। আর আমার মুখের ওপর হাত দিয়ে চেপে ধরেন। আমি কাঁদতে থাকি। আমি অচেতন হয়ে গেলে তিনি আমাকে ধর্ষণ করেন।’
পরদিন সুভাষ ঘাই মেয়েটিকে তাঁর বাসায় নামিয়ে আসেন। এই ঘটনার পর মেয়েটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কয়েক দিন তিনি কাজে যাননি। মেয়েটিকে হুমকি দেওয়া হয়, যদি তিনি চাকরিটা ছেড়ে দেন, তাহলে পাওনা টাকা পাবেন না। কিন্তু সেই জঘন্য ঘটনার পর মেয়েটি সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গে আর কথা বলেননি।
এদিকে ৭৩ বছর বয়সের সুভাষ ঘাই তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের কথা আমি শুনেছি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি, যেকোনো খ্যাতনামা মানুষের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কিছু ঘটনা কোনো সত্যতা ছাড়াই প্রকাশ করা হচ্ছে। আমি এই মিথ্যা অভিযোগ অত্যন্ত কড়াভাবে বিরোধিতা করছি।’
প্রবীণ এই পরিচালক আরও বলেন, ‘যদি মেয়েটি এই ধরনের অভিযোগ থাকে, তাহলে তার আদালতে গিয়ে প্রমাণ করা উচিত। আর তা না হলে আমি নিশ্চিতভাবে মানিহানির মামলা করব।’