২০০৪ সালের ‘মিস ইন্ডিয়া’ ও বলিউড তারকা তনুশ্রী দত্ত শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া তিনি একই ধরনের অভিযোগ করেছেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী আর প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধেও। ভারতের টিভি চ্যানেল নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবি করতে গিয়ে নানা পাটেকার তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছেন। আর ডিএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ২০০৫ সালে ‘চকলেট’ ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁকে জামা খুলে অন্য দুই শিল্পী সুনীল শেঠি আর ইরফান খানের সামনে নাচার জন্য বলেন। একই সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে এই পরিচালকের ছবি ‘গন্ধ’তে অভিনয় করতে গিয়ে যৌন হেনস্তার শিকার হন। তাঁকে দিয়ে জোর করে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করানো হয়। ওই সময় তাঁকে নগ্নভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। প্রেমাংশু রায় এই ছবির কাজের পরও তনুশ্রী দত্তের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখেন।
এবার তনুশ্রী দত্তের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলিউডের নির্মাতা আর অভিনয়শিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে আছেন ফারহান আখতার, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর, টুইঙ্কল খান্না, পরিণীতি চোপড়া, রিচা চাড্ডা, স্বরা ভাস্কর, রাভিনা টেন্ডন প্রমুখ। এখন সবাই এসব ঘটনার প্রতিবাদ করছেন, কথা বলছেন, ভুক্তভোগীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সমর্থন দিচ্ছেন। সবার সমর্থন পেয়ে খুশি তনুশ্রী দত্ত। তবে তিনি বলেছেন, ‘শুধু সমর্থন করে বা মুখ খুলে এ ধরনের অপরাধ আটকানো যায় না। তা বন্ধ করতে নানা পাটেকারের মতো অভিনেতা আর পরিচালকের সঙ্গে কাজ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এই সমর্থন করে কোনো ফল পাওয়া যাবে না।’
আবার ইনস্টাগ্রামে নানা পাটেকারের সঙ্গে ফারহা খান একটি ছবি পোস্ট করেছেন৷ এই ছবি দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে নন৷ এসব অভিযোগ তিনি বিশ্বাস করেননি।
তনুশ্রী দত্তের বোন ঈশিতা দত্ত বলিউড লাইফকে বলেছেন, ‘১০ বছর আগে যখন ঘটনাটি ঘটেছিল, তখন তনুশ্রী পুরো ব্যাপারটি তাঁর পরিবারকে জানিয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার দিদি এটাই বলতে চেয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা কারও সঙ্গে ঘটলে তিনি যেন নিজেকে দোষী না মনে করেন, লজ্জা না পেয়ে পুরো বিষয়টি যেন প্রকাশ্যে আনেন।’
এদিকে ইন্ডিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালে নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে শিল্পীদের সংগঠনে অভিযোগ করেছিলেন তনুশ্রী দত্ত। প্রতিকার দূরে থাক, এরপর ছবির আইটেম গান থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। তাঁর বদলে নেওয়া হয় রাখী সাওয়ান্তকে। সম্প্রতি দেওয়া সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দত্ত বলেন, ‘আমার বদলে রাখী সাওয়ান্ত! এর চেয়ে বড় অপমান আর কী হতে পারে! পরে শুনেছিলাম, সেটে এসে আমাকে নিয়ে রাখী সাওয়ান্ত অনেক খারাপ মন্তব্য করেছেন৷’ জানা গেছে, ওই সময় ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে গিয়ে রাখী বলেছিলেন, ‘তনুশ্রীর গায়ে হিরে-সোনা লাগানো আছে যে ওকে ছোঁয়া যাবে না?’
এবার তনুশ্রী দত্তের ওপর খেপেছেন বলিউডের বিতর্কিত নায়িকা রাখী সাওয়ান্ত। তনুশ্রী দত্তকে মাদকাসক্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাঁর সব অভিযোগ মিথ্যা। নানা পাটেকারের মতো মানুষ হয় না, তনুশ্রীর আসলে মাথা ঠিক নেই৷’ তিনি আরও বলেন, ‘ও আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করেছে, কিন্তু তনুশ্রী কী? এত দিন কেন চুপ করে ছিল? ১০ বছর ধরে কোমায় ছিল যে মুখ খুলতে পারেনি৷ এখন এত কথা ফুটছে ওর মুখে? বলিউডে ওর কোনো কাজ নেই, কেউ ওকে কাজ দেয় না৷ আমেরিকায় ভিক্ষা করত, সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ইংরেজিতে দু-একটা কথা বলল আর সবাই তা সত্যি মেনে ওকে সমর্থন করছে৷ পরে ওই সেটে আমিও কাজ করেছি। ওখানে কেউ নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি৷’
এখন শোনা যাচ্ছে, নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্ত যে অভিযোগ করেছেন, তা প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার কথা ভাবছেন নানা পাটেকার। তবে সম্প্রতি মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে তনুশ্রীর এসব অভিযোগের ব্যাপারে নানা পাটেকারকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কী বলব বলুন? আমার কী করার আছে? যৌন হেনস্তা বলতে কী বোঝাতে চান তনুশ্রী? ওই দিন শুটিং সেটে ৫০-৬০ জন ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, এই বিষয়ে আলোচনা করা মানে শুধু শুধু সময় নষ্ট করা।’