প্রথা ভাঙলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি
৬৪ বছর ধরে ভারতে চলে আসা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়ার প্রথা ভাঙলেন ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ১৪০ জন পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র ১১ জনকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দিয়ে প্রথা ভাঙলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন অন্য পুরস্কারপ্রাপ্তরা। তাঁরা রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিয়ে বয়কট করেছেন এই অনুষ্ঠান।
কথা ছিল এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার বিজয়ী ১৪০ জনের হাতে তুলে দেবেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগে জানানো হয় রাষ্ট্রপতির সময় নেই। তাই তিনি ১১ জন সেরা পুরস্কারপ্রাপ্তর হাতে তুলে দেবেন এই পুরস্কার আর বাকিদের পুরস্কার দেবেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। এ খবরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি পুরস্কার জয়ীরা। তাঁরা বুধবার পৌঁছে যান দিল্লিতে। মহড়ার সময় জানতে পান এ কথা। ফলে তাঁরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এর জেরে অনুপস্থিত থেকে ৭০ জন শিল্পী বয়কট করেন এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
গতকাল সকালে বিক্ষুব্ধরা রাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডিরেক্টর অব ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে চিঠি দিয়ে তাঁদের উষ্মা প্রকাশ করেন। এ ঘটনার পর পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ক্ষুব্ধ শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করেন নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান শেখর কাপুর। এ সময় শিল্পীরা জানান, রাষ্ট্রপতিই সব পুরস্কারপ্রাপ্তদের নিজের হাতে পুরস্কার দিন, এটাই তাঁরা চান। কিন্তু তা নিশ্চিত করতে পারেনি শেখর কাপুর।
তবে রাষ্ট্রপতি যে সেরা ১১ জনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার জয়ী প্রখ্যাত অভিনেতা প্রয়াত বিনোদ খান্না, সেরা অভিনেত্রী প্রয়াত শ্রীদেবী। বিনোদ খান্নার পক্ষে তাঁর পুরস্কার গ্রহণ করেন ছেলে অক্ষয় খান্না। আর শ্রীদেবীর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন স্বামী বনি কাপুর, মেয়ে জাহ্নবী ও খুশি। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি পুরস্কার তুলে দেন সেরা পরিচালক জয়রাজ, সেরা গায়ক যীশুদাস, সেরা সংগীত পরিচালক এ আর রহমান, সেরা অভিনেতা ঋদ্ধি সেন প্রমুখের হাতে। বাকিরা পুরস্কার নেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির হাত থেকে।
এ ঘটনার পর পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘তাঁদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়, তাঁরা জাতীয় পুরস্কার দিচ্ছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা দেশের সেরা। তাঁদের জন্য রাষ্ট্রপতির যদি সময় না থাকে, তিনি যদি পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানের জন্য মাত্র দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে না পারেন, তবে তা দুর্ভাগ্যের বিষয়। তা ছাড়া যখন এই পুরস্কার একজন মন্ত্রী তুলে দেবেন, সেটা হয়ে যাবে রাজনৈতিক। আমরা এটা চাইনি। রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন। তাই রাষ্ট্রপতির হাতে ছাড়া অন্য কারও হাত দিয়ে পুরস্কার নেওয়া অসম্মানজনক।’
অন্যদিকে সেরা অভিনেতার সম্মান পাওয়া কলকাতার ঋদ্ধি সেন বলেছেন, জাতীয় পুরস্কার পাওয়া খুবই সম্মানের। রাষ্ট্রপতির মাত্র ১১ জনকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এবারের সেরা বাংলা ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’র পরিচালক অতনু ঘোষ বলেছেন, রাষ্ট্রপতির কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিতি অপ্রত্যাশিত।
এ ঘটনার পর প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে এই পুরস্কার দেন, এটাই ছিল প্রথা। রাষ্ট্রপতি এবার এই পুরস্কার তাঁর নিজের হাতে না দেওয়ায় সংগত কারণেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিল্পীরা।
প্রখ্যাত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বলেছেন, রাষ্ট্রপতির হাতে ১১ জন পুরস্কার নেবেন, আর বাকিরা নেবেন অন্যের হাত থেকে, এটা অনুচিত। পরিচালক গৌতম ঘোষ বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার না পেয়ে ক্ষুব্ধ হতে পারেন যে কেউ। তবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে জানানো উচিত, উৎসব বয়কট করে নয়। আমি বয়কটের বিরুদ্ধে।’ যদিও গত বছর এই পুরস্কার দিয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।