হো চি মিনের ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি
বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালে হো চি মিন ইসলামের যোগ দিতে না পারার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে তিন দিন সময় দিয়েছে ইউজিসি। গত রোববার ইউজিসি এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে।
ইউজিসি বলছে, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো চি মিন ইসলামকে “উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল–এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস” অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি কেন প্রদান করা হয়নি এবং এ ধরনের ঘটনা বা চর্চার পুনরাবৃত্তি যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য তিন কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে।’
ইউজিসি এ–সংক্রান্ত নোটিশে বলেছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার সূতিকাগার। এরূপ চর্চা ও বিশ্ববিদ্যালয় একে অপরের পরিপূরক। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এরূপ আচরণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০, মুক্তচিন্তার বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাংলাদেশের সংবিধান এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার পরিপন্থী।’
একটি গোষ্ঠীর আন্দোলনের ফলে শেষ পর্যন্ত হো চি মিন ইসলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দিতে পারেননি। বেসরকারি সংগঠন হিরোজ ফর অল ও আইসোশ্যাল আয়োজিত ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যাল-এক্সপ্লোর ইয়োর ফিউচার উইথ আস’–এর একটি সেশনে শুক্রবার হো চি মিন ইসলাম বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি লিঙ্গ রূপান্তরিত নারী (ট্রান্সজেন্ডার)। হো চি মিন ইসলামের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে আয়োজক সংস্থাও শেষ পর্যন্ত তাঁকে অনুষ্ঠানে যেতে নিষেধ করে।
শনিবার হো চি মিন ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁকে বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আয়োজক সংস্থা তাঁর ছবি দিয়ে পোস্টারও ছাপিয়েছিল। তবে তারপর একটি গোষ্ঠী (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ) অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি আটকাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ই-মেইল দিয়ে ও বিভিন্নভাবে আন্দোলনের হুমকি দিতে থাকে।
হোচিমিন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমি উগ্র গোষ্ঠীর আক্রমণের শিকার হয়েছি। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। আমার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আয়োজক সংস্থাও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেল। জাতিসংঘের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কেউ পিছিয়ে থাকবে না বলা হচ্ছে। অথচ আমাকে বাদ দিয়েই অনুষ্ঠান হলো। আয়োজক সংস্থা প্রতিবাদ হিসেবে অনুষ্ঠান বর্জন করেনি বা অনুষ্ঠানস্থলও পরিবর্তন করেনি।’
বেসরকারি সংগঠন হিরোজ ফর অলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক রেহনুমা করিম। হো চি মিন ইসলামকে বক্তা হিসেবে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে রোববার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে হো চি মিন ইসলাম যাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারেন, সে নিয়ে অনেক হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
এদিকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো চি মিন ইসলামের বক্তব্য দিতে না পারার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, শিক্ষার মান ধরে রাখার পাশাপাশি সবার জন্য একটি সম্মানজনক পরিবেশ বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট। তবে উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালে ঘটে যাওয়া ঘটনায় এই লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে। রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের এ অবস্থান তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা এই অনুষ্ঠানে হো চি মিন ইসলামের অংশগ্রহণের বিষয়ে জনগণের ভিন্ন মতামতকে সম্মান করি। এসব দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমাজের বিভিন্ন বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তৃতি ও সংলাপকে উৎসাহিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার শক্তিতে বিশ্বাস করে। হো চি মিনের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য ছিল, কর্মক্ষেত্রে প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অর্জন তুলে ধরা।’
অনুষ্ঠানে হো চি মিন অন্যতম বক্তা হলেও কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার ফলে নির্ধারিত আলোচনা বাতিল করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বক্তা ও আয়োজক উভয়ের জন্য দুঃখজনক এ ঘটনাকে বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় নিয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। উদাহরণ টেনে তারা বলেছে, বলা হচ্ছে, হো চি মিনের আলোচনা বাতিল করেছে উপাচার্য কার্যালয়। অথচ উপাচার্য আতিকুল ইসলাম ওই সময় দেশের বাইরে ছিলেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোনো সহ–উপাচার্যও নেই।