ডিসেম্বরের এই উত্তাল সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে না। এর মধ্যে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা ঘুরতে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দীপ্ত, সানি, জয়, অমিয় দাশ ও শারমিন ইসলাম। তাঁদের সবার একই কথা, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ঋণ শোধ করতে যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ চাই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা পরিদর্শনে এলে আপনি তিনটি গ্যালারির দেখা পাবেন। প্রতিটিই আলাদা আলাদাভাবে মুক্তিযুদ্ধোর নানা স্মৃতি দিয়ে সাজানো। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রথম গ্যালারিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এখানে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. মো. সামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি, ব্যবহূত জিনিসপত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহূত বিভিন্ন পোশাক-আশাক ছাড়াও এখানে রয়েছে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র, নিহত শহীদ আসাদের কিছু দুর্লভ ছবি, বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্মিত রাজশাহীর প্রথম শহীদ মিনারের ছবি এবং রাজশাহীতে উত্তোলিত প্রথম জাতীয় পতাকাটি।
দ্বিতীয় গ্যালারিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহূত জিনিসপত্র ও পোশাক। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীকী ভাস্কর্যও এই সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। রয়েছে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর ছবি। রাজশাহীর শহীদ সিদ্ধার্থ সেন, ডা. মিহির কুমার সেন, ডা. হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সরকারসহ আরও অনেকের ছবি রয়েছে এখানে। একাত্তরের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কিছু দুর্লভ ছবি এই গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে।
তৃতীয় গ্যালারিতে রয়েছে একাত্তরের গণহত্যায় নিহত অসংখ্য শহীদের মাথার খুলি আর হাড়। যার বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে জোহা হলের পাশে অবস্থিত গণকবর থেকে। অপরদিকে গ্যালারির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্র। রয়েছে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও বিজয়ী মুক্তিসেনাদের ছবি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন কমিটির সভায় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল এই সংগ্রহশালাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন একই বছরের ৬ মার্চে। পরবর্তী সময়ে শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার আধুনিক প্রদর্শনী কক্ষগুলোর উদ্বোধন করা হয় ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।