বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা আর অ্যানিমে দেখা মেয়েটা পড়াশোনায়ও খুব ভালো। নাম ফারজানা কবির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ফার্মাসি বিভাগে স্নাতক শেষ করেছেন। ৪-এর মধ্যে তাঁর সিজিপিএ ছিল ৩.৯৮! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, এ রকম সিজিপিএর পাশে আশ্চর্যবোধক চিহ্নটা বেমানান দেখায় না।
ছোটবেলায় নভোচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এরপর ইচ্ছে হলো সামুরাই হবেন! নবম-দশম শ্রেণিতে উঠে পদার্থবিজ্ঞান ভালো লাগা শুরু করল। কিন্তু কীভাবে যেন একসময় ফারজানা রসায়নের প্রেমে পড়ে গেলেন। তাঁর ধারণা, ‘জৈব রসায়ন’ অধ্যায়টা তাঁকে কাবু করেছে। এরপর আর কী করা, স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার সময় মনেপ্রাণে সাধনা করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। কারণ, তত দিনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়ে ফেলেছেন, ঢাবির ফার্মাসি বিভাগে পড়বেন। সাধনা সফল হলো। ৯১তম হয়ে টিকে গেলেন। ফলাফলের দিনটা খুব সুখের ছিল ফারজানার কাছে। সেই খুশিতে লাফাতে লাফাতে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরার স্মৃতি তাঁর মনে এখনো টাটকা!
চট্টগ্রামের মেয়ে ফারজানা পড়াশোনা করেছেন সেন্ট স্কলাস্টিকা, সেন্ট মেরিস, ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় আর চট্টগ্রাম কলেজে। প্রাইমারি স্কুলে কয়েক বার প্রথম হয়েছেন। এরপর প্রথম সারির শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজে উঠে অনেক দিন পর আবার প্রথম হওয়ায় নাকি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি, ২০১০ সালে এসএসসি ও ২০১২ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস, আর এবার স্নাতকে (বিফার্ম) সিজিপিএ ৩.৯৮। নিজ বিভাগে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছেন তিনি। সামনের সমাবর্তনে সম্মাননা পাওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই। বেজায় খুশি ফারজানা তাই দিন গুনছেন। স্নাতকে প্রথম দুই বছর প্রথম হওয়ায় পেয়েছেন ‘বদরুন্নেসা মেমোরিয়াল ট্রাস্ট স্কলারশিপ’। স্কুল-কলেজে সব সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। গান গাইতেন, বিতর্ক করতেন। ছবি আঁকা শিখেছেন নিজ আগ্রহে। ছবি তোলার শখও তাঁর আছে।
এখন ফারজানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসিতে স্নাতকোত্তর (এমফার্ম) করছেন। ইচ্ছে আছে গবেষক হওয়ার। কী নিয়ে গবেষণা করবেন? উত্তরে বলেন, ‘আমি ফার্মাসিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে গবেষণা করতে চাই। সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ড্রাগ সিনথেসিস বা ডেভেলপমেন্ট নিয়ে।’ সে জন্য হাতেখড়ি নিচ্ছেন। এই যেমন, ‘মলিকুলার মডেলিং ও ড্রাগ সিনথেসিস’–এর ওপর একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গবেষণা করতে চান। গবেষণার সুবিধার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান শিক্ষকতা।
বাবা অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক আহমেদ কবির আর মা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহেদা ইসলাম কখনোই মেয়েকে পড়াশোনার জন্য চাপ দেননি। চার বোনের মধ্যে তৃতীয় ফারজানা কবির সব সময় নিজের আগ্রহে পড়েছেন। পরীক্ষার ফল নয়, দিন শেষে তাঁর কাছে বড় হলো, ‘আমি কী জানলাম।’