সবার আগে মনোযোগ দেওয়া দরকার কৃষি খাতে
করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব এখন প্রায় স্তব্ধ। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। কলকারখানা বন্ধ। মানুষ গৃহবন্দী। তাই অর্থনীতিতে যে বড় বিপর্যয় আসছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে দেশে দেশে খাদ্যসংকট শুরু হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা আরও কঠিন। এখানে দিন আনে দিন খায় মানুষের সংখ্যা বেশি। তাদের বেশি দিন ঘরে রাখা যাবে না। সরকারও বেশি দিন ভর্তুকি দিতে পারবে না। তাহলে করণীয় কী? এটাই সবার আগে ভাবতে হবে।
আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া দরকার কৃষি খাতে। কারণ, করোনার প্রভাবে সামনে খাদ্যসংকট হবে। আমরা যাতে এই অবস্থার মুখোমুখি না হই, সে জন্য এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। সরকার কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছে। ফলন বাড়াতে আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা দেখা দরকার। এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
এই মুহূর্তে জটে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় অচলাবস্থা চলছে। আকাশপথ বা স্থলবন্দর প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বৈদেশিক বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম চট্টগ্রাম বন্দর। খাদ্যপণ্য ও জরুরি ওষুধ, সরঞ্জাম আসছে এই বন্দর দিয়ে। এ মুহূর্তে বন্দর সচল রাখার জন্য বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
খুব অল্প সময়ে এই ভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। এ পরিস্থিতিতে ঝুঁকি মোকাবিলা করে কীভাবে কলকারখানা চালু রাখা যায়, তা ভাবতে হবে। সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে পোশাক খাতসহ উৎপাদনমুখী খাতকে সচল রাখা যায় কি না, সেটি নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনা শুরু করা উচিত।
সামনে আমাদের ভাবতে হবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। করোনার পর বিশ্বের সব দেশই স্বাস্থ্য খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। স্বাস্থ্য খাতের নানা উপকরণের আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। এই খাতে কীভাবে সক্ষমতা বাড়ানো যায়, তা ভাবতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য খাত ঠিক না থাকলে অর্থনীতিও ভালো রাখা যাবে না।
করোনাভাইরাসের প্রভাব কত দিন থাকবে, তার ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনের অর্থনীতি। ইতিমধ্যে রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয়সহ উৎপাদনমুখী খাতে যে প্রভাব পড়েছে, তা পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগবে। করোনা–পরবর্তী সময়ে রপ্তানি বাজারে প্রচলিত পণ্যের বাইরে নতুন পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে। নতুন পণ্য তৈরির পাশাপাশি নতুন বাজারও খুঁজতে হবে আমাদের। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে শ্রমিকের চাহিদা হয়তো আগের মতো থাকবে না। প্রবাসী আয়ও কমে যাবে। আমদানি-রপ্তানি কমে সরকারের রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের ঘাটতি হবে আগামী দিনে।