শেয়ারবাজারে ৯ মাসে কমেছে ১২০০ পয়েন্ট
দেশের শেয়ারবাজারে টানা পতন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে ঋণগ্রস্ত অনেক বিনিয়োগকারী মূলধন খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কারণ, ঋণের টাকা আদায়ে ঋণদাতা অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি (ফোর্সড সেল) করে দিয়েছেন। তাতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণের অর্থ ফেরত পেলেও অনেক বিনিয়োগকারী মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
শেয়ারবাজারে পতন শুরু হয়েছে গত জানুয়ারি থেকে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর কিছুদিন সূচকের বড় ধরনের উত্থান ঘটে। এরপর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে বাজারে পতন শুরু হয়, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দুই বাজারে সূচকের বড় ধরনের পতন ঘটে। সেই সঙ্গে লেনদেনও আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৪৮ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি কমেছে ১৪৫ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ। ঢাকার বাজারে এদিন লেনদেন কমে নেমে এসেছে ২৯৮ কোটি টাকায়, ১৬ জুলাইয়ের পর এটি ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন।
এদিকে ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা পতনে প্রায় ৯ মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক প্রায় ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট কমে গেছে। একই সময়ের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬০ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। গত ২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টের অবস্থানে। গতকাল দিন শেষে তা কমে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। সেই হিসাবে প্রায় ৯ মাসে এ সূচক কমেছে ১ হাজার ১৮৮ পয়েন্ট। আর ২৪ জানুয়ারি বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। গতকাল তা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায়। টানা পতনে গতকাল দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি ফিরে গেছে ২০১৬ সালের নভেম্বরের অবস্থানে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি ৪ হাজার ৭৫০ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।
বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পতনের কারণে বাজারে ব্যাপকভাবে ফোর্সড সেল শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে এখন চরম ক্রেতাসংকট তৈরি হয়েছে। এমনিতেই নতুন বিনিয়োগ আসছে না বাজারে। তার ওপর বিক্রির চাপ বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে। এতে বাছবিচার ছাড়া সব ধরনের শেয়ারেরই ব্যাপক দরপতন ঘটছে। এমনকি ভালো লভ্যাংশ ঘোষণার পরও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমসের অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের তেমন একটা আস্থা নেই। এ কারণে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। আবার আর্থিক খাতেও রয়েছে তারল্যসংকটসহ নানাবিধ সমস্যা। শেয়ারবাজারের প্রাইমারি তথা আইপিও বাজারেও চরম দুরবস্থা চলছে। এসব সমস্যা জিইয়ে থাকলে বাজারে নতুন বিনিয়োগ আসবে না। তাই বাজারে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে আর্থিক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় ও সমন্বিত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে পদক্ষেপ নিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা যাবে না।
মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকালের বাজারে সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্রামীণফোন ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। আর খাতভিত্তিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটেছে সিমেন্ট খাতের।