দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীতে গড়ে উঠছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। এ ছাড়া পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার অবস্থানও এ জেলায়। অবকাঠামো–সুবিধা থাকার পরও সেখানে প্রত্যাশিত শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। উদ্যোক্তারা বলছেন, শিল্প স্থাপনের জন্য জমি কিনতে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এ জেলায়। আগামী বাজেটে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা চেম্বার সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পটুয়াখালী প্রতিনিধি শংকর দাস।
প্রথম আলো: সামনে বাজেট। এবারের বাজেটকে সামনে রেখে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: বাজেটকে ঘিরে সব সময়ই ব্যবসায়ীদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। আমার প্রত্যাশা, বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা নতুন নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে আমি চাই বাজেটে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে, বিনিয়োগ বাড়বে। পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে এবারের বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরই মধ্যে পটুয়াখালীর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা, তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। এ অঞ্চলের যোগাযোগসুবিধা বাড়াতে রেল লাইন নির্মাণ এবং চার লেনের সড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ থাকবে হবে বলে আশা করছি। তবে এ অঞ্চলে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, সেই তুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার কিংবা শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। আশা করছি এবারের বাজেটে এখানকার পর্যটন ও সমুদ্রবন্দরকেন্দ্রিক এবং কৃষিনির্ভর শিল্প গড়ে তোলার জন্য বিশেষ প্রণোদনার সুযোগ রাখা হবে।
প্রথম আলো: বর্তমানে এ অঞ্চলের তথা সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই নন, পটুয়াখালীর বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ নিয়ে এখানে বিনিয়োগ করতে এসে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিশেষ করে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ঘিরে সরকার যে মহাপরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফলে কোথায় কী ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে তা ব্যবসায়ীরা জানতে পারছেন না। এ কারণে উদ্যোক্তারা কোথায় এবং কী ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে তুলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তা ছাড়া কুয়াকাটায় জমি কেনাবেচা নিয়েও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কারণ, সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সামনে থাকায় কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় জমির বেচাকেনা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে জমি কেনার সুযোগ থাকলেও তাতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। তাই ব্যবসায়ীরা এ এলাকায় বিনিয়োগে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
প্রথম আলো: পটুয়াখালীতে কোন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: বর্তমানে এ অঞ্চলে পায়রা বন্দর ও পর্যটনশিল্পকেন্দ্রিক কিছু বিনিয়োগ হচ্ছে, তবে তা সামান্য। কুয়াকাটায় আগে থেকেই কিছু হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। পায়রা বন্দর হলেও এ এলাকায় এখনো পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের তেমন কোনো প্রসার ঘটেনি। অনেকে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখালেও জমি মিলছে না। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বর্তমানে এ এলাকায় ব্যক্তিমালিকানা জমিও ব্যবসায়ীরা কিনতে পারছে না। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করা গেলে উদ্যোক্তাদের অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। তাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
প্রথম আলো: পটুয়াখালীতে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কেমন?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: আসলে আমরা যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানার সঙ্গে জড়িত, তারা এ এলাকায় তরুণদের জন্য তেমন কোনো কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারছি না। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিল্পকারখানা বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু এ এলাকায় বলতে গেলে বড় ধরনের কোনো শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে না। তরুণদের অনেকে নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুললেও পছন্দের কাজ না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন। তবে তরুণদের এগিয়ে নিতে হলে সরকারের সহায়তা দরকার। তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সবার আগে স্বল্পসুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনা থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।
প্রথম আলো: বর্তমানে এ এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা স্থাপনে ব্যাংকঋণের সুবিধা কেমন? চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাওয়া যায় কি?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: এ এলাকায় নতুন কোনো উদ্যোগ বা ব্যবসার জন্য ঋণ পাওয়া অনেকটাই দুরূহ। ব্যাংকগুলো তাদের কিছু পুরোনো গ্রাহককেই ঘুরেফিরে ঋণসুবিধা দিচ্ছে। এ কারণে নতুন উদ্যোক্তারা খুব বেশি ব্যাংকঋণসুবিধা পাচ্ছেন না। তাই আমি মনে করি, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ পাওয়ার একটি নীতিমালা করা দরকার। যাতে করে ব্যাংকগুলো তাদের ঋণের একটি অংশ নতুন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের দিতে বাধ্য হয়। সেটি হলে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা উঠে আসবে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে নতুনদের আগ্রহ বাড়বে।
প্রথম আলো: পটুয়াখালীতে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার মতো অবকাঠামো–সুবিধা আছে কি?
মহিউদ্দিন আহম্মেদ: আমি মনে করি পটুয়াখালীতে ভারী শিল্পকারখানা গড়ে তোলার মতো অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। তবে এ অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের বেশি আগ্রহ পর্যটন ও পায়রা বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে। এখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রুর্যাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল), আশুগঞ্জ পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আশা করছি ধীরে ধীরে এ এলাকায় ভারী শিল্পস্থাপনে উদ্যোক্তারা আরও বেশি এগিয়ে আসবেন।