নতুন বিধানে আটকাবে গ্রামীণফোন
>
- নতুন প্রবিধানমালা জারি করেছে বিটিআরসি
- মোবাইল ফোনের মোট গ্রাহক ১৫ কোটি ৫৮ লাখ
- গ্রামীণফোনের গ্রাহক মোট গ্রাহকের প্রায় ৪৬ শতাংশ
- রবি আজিয়াটার গ্রাহক বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ
- বাংলালিংকের বাজার হিস্যা প্রায় ২২ শতাংশ
দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রতিযোগিতা আনতে নতুন প্রবিধানমালা জারি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে একক বাজার হিস্যা, জোট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা, ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এতে বিপাকে পড়বে দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। কারণ, নতুন প্রবিধানমালায় স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, কোনো মোবাইল অপারেটরের গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব অথবা তরঙ্গের দিক দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা থাকলে তাকে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধারী বা সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) হিসেবে ঘোষণা করা যাবে। এমন কোনো অপারেটরের ক্ষেত্রে করণীয় ও বর্জনীয় ঠিক করে দিতে পারবে বিটিআরসি।
গ্রাহকসংখ্যা ও রাজস্বের দিক দিয়ে গ্রামীণফোনের বাজার হিস্যা এখন ৪০ শতাংশের বেশি। ফলে গ্রামীণফোনের আরও বড় হওয়ার ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষমতা পেল বিটিআরসি। অবশ্য কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে, তা প্রবিধানমালায় নেই। এটা নির্ভর করবে কমিশনের ওপর।
জানতে চাইলে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ‘বাজারের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির জন্য, গ্রাহকের সুবিধার জন্য আমরা যেটা আইনে আছে, সেটাই করব।’
অবশ্য শুধু মোবাইল অপারেটর নয়, বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন প্রবিধানমালা করেছে। তবে অন্য ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা কত শতাংশ, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি।
বিটিআরসির প্রবিধানমালা গত বুধবার জারি করা হয়। এ নিয়ে বিটিআরসি ২০১১ সাল থেকে কাজ করছিল। ‘তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা-২০১৮’ শীর্ষক নতুন বিধিতে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা বলতে এমন একক বা যৌথ ক্ষমতাকে বোঝানো হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিযোগীর আচরণ আমলে না নিয়ে এমন কাজ করা যায়, যা প্রতিযোগীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
প্রবিধানে আরও বলা হয়, বিটিআরসি বাজারের কেন্দ্রীয়করণ, প্রবেশে বাধার মাত্রা, সরবরাহ, মূল্য নির্ধারণ, স্বাধীনতার মাত্রা, মোট বিক্রিতে হিস্যা, রাজস্বে হিস্যা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা নির্ধারণ করতে পারবে। এসব বিধান টেলিযোগাযোগ খাতের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য।
দেশে এখন মোবাইল ফোন অপারেটর চারটি, যার মোট গ্রাহক ১৫ কোটি ৫৮ লাখ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৭ কোটি ১৪ লাখ, যা মোট গ্রাহকের প্রায় ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে দ্বিতীয় শীর্ষ অপারেটর রবি আজিয়াটার গ্রাহক বাজারের প্রায় ৩০ শতাংশ। বাংলালিংকের বাজার হিস্যা প্রায় ২২ শতাংশ।
গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অপারেটরদের মোট রাজস্বে তাদের হিস্যা ২০১৭ সালে প্রায় ৫৩ শতাংশ ছিল। এই বাইরে রবির ২৮ ও বাংলালিংকের ১৮ শতাংশ বাজার হিস্যা ছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, তারা এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি। গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে তাদের মনে হচ্ছে, সরকার দৃশ্যত আন্তর্জাতিকভাবে সেরা রীতিনীতি থেকে সরে যাচ্ছে। গ্রামীণফোন আরও বলেছে, এ ধরনের জটিল ও সুদূরপ্রসারী প্রবিধানের ক্ষেত্রে আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা দরকার।