বাণিজ্য মেলায় চাকরি পাওয়ার গল্প
নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলায় বাংলাদেশসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪৮৩টি স্টল রয়েছে। ছোট-বড় প্রতিটি স্টলে বিকিকিনিতে সহযোগিতা করছেন একদল দক্ষ ও চৌকস বিক্রয়কর্মী। সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন এই কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। জেনে নেওয়া যাক তাঁদের চাকরি পাওয়ার টুকরো গল্প।
মেলায় ঢুকতেই দেখা গেল রিগ্যাল ফার্নিচারের প্যাভিলিয়ন। এখানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন আয়েশা নাদিয়া। তিনি বঙ্গবন্ধু আইন কলেজে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর কাছে চাকরি পাওয়ার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘বছরের প্রথম দিকে ক্লাস থাকে না। অবসর সময় কাটে। আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পরলাম বাণিজ্য মেলার খণ্ডকালীন চাকরি সম্পর্কে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিভি দিলাম। ডাক এল এখান থেকে। তারপর রীতিমতো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় টিকে চাকরি মিলল।’
আয়েশা নাদিয়ার মতো ১৫ জন শিক্ষার্থী রিগ্যাল ফার্নিচারের প্যাভিলিয়নে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এ প্রসঙ্গে কথা হয় প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক মো. ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কর্মীদের দক্ষতা যাচাই করে ৭ থেকে ১৪ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আমরা মেলায় কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকি। এখানে আকর্ষণীয় বেতনের পাশাপাশি দুপুরের খাবার, সকাল-বিকেলের নাশতা এবং রাত্রিকালীন যাতায়াতের জন্য গাড়ির সুবিধা রয়েছে। এক মাসের কাজের অভিজ্ঞতা সনদও দেওয়া হয়। তা ছাড়া যারা ভালো করবে, তাদের বোনাস ও স্থায়ীভাবে চাকরির সুযোগও থাকছে।’
বেঙ্গল প্লাস্টিকের শোরুমে পণ্যের তথ্য ক্রেতাকে জানাচ্ছিলেন জুয়েল। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে নিয়মিত থাকা হয়। হঠাৎ একটা ফেসবুক গ্রুপে এখানকার চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখি।’ তাঁর পাশেই ছিলেন মো. রায়হান। তাঁরা দুজনেই সরকারি তিতুমীর কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁরা একসঙ্গে সিভি জমা দেন। তারপর লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় বসে তাঁরা দুই বন্ধু একসঙ্গে পেয়ে গেলেন জীবনের প্রথম চাকরি।
পরীক্ষা কিংবা সিভি জমা না দিয়ে শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন কেউ কেউ। এ রকম দুজন নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সানজিদা শারমিন ও নাসিমা আক্তার। তাঁরা জানান, তাঁরা দুই বছর ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইভেন্টে কাজ করছেন। গত বছরও মেলায় কাজ করেছেন। সেই যোগাযোগ ধরে রেখেছিলেন। তাই এবার খুব সহজেই চাকরিটা পেয়েছেন। তাঁরা গত বছর প্রাণ কোম্পানির প্যাভিলিয়নে কাজ করলেও এবার চাকরি করছেন বেঙ্গল প্লাস্টিকের প্যাভিলিয়নে।
হাতিল ফার্নিচারের শোরুমে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন আরিফ আহমেদ। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করান। বাণিজ্য মেলায় কাজ করে একটি কম্পিউটার কিনতে চান। তিনি বলেন, ‘বন্ধুমহল থেকে খোঁজ পাই বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরি সম্পর্কে। শোরুমে খোঁজখবর ও যোগাযোগ রাখতে শুরু করি। অক্টোবর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হই।’
মেলায় চাকরির সুযোগ প্রসঙ্গে আকিজ গ্রুপের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (করপোরেট সেল) রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চৌকস, উদ্যমী, পরিশ্রমী, সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, ইংরেজিতে দক্ষ, দৃঢ়প্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী তরুণ-তরুণীদের আমরা সাধারণত নিয়োগ দিয়ে থাকি। একজন কর্মীকে সাধারণত কমবেশি ২৫ হাজার টাকা বেতনসহ বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান কাউকে যোগ্য মনে করলে স্থায়ীভাবে নিয়োগও দিতে পারে।’
যাঁরা পরের বাণিজ্য মেলায় চাকরিটা বগলদাবা করবেন বলে ভাবছেন, তাঁদের চলতি বছরের অক্টোবর–নভেম্বর থেকে চোখ রাখতে হবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন চাকরিভিত্তিক গ্রুপে এবং বাণিজ্য মেলায় স্টল আছে—এমন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে। চাকরি মিললে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয়ের নিশ্চিত সুযোগ পাবেন। সঙ্গে অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ দক্ষতা, বিপণন–সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ, যা প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে। জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে প্রস্তুত থাকুন।