বান্দরবানের আকর্ষণ সুস্বাদু মুন্ডি
বান্দরবানের আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী খাবার মুন্ডির খ্যাতি দিন দিন বাড়ছে। অনেকটা নুডলসের মতো এই খাবার বিক্রির জন্য বান্দরবান শহরে বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে মুন্ডি হাউস। এসব রেস্তোরাঁয় বিকেল থেকে রাত অবধি জমজমাট থাকে কেনাবেচা। স্থানীয় আদিবাসী ও বাঙালিদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই খাবার।
বিকেল হলেই তরুণ-তরুণীরা দলে দলে মুন্ডি খাওয়ার জন্য বের হয়ে পড়েন। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে শহরের উজানীপাড়া, মধ্যমপাড়া ও বালাঘাটা এলাকায় অনেকগুলো মুন্ডি হাউস গড়ে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী এই খাবার তৈরি হয় চাল থেকে। তবে মিয়ানমার ও চীনের নুডলসের আগ্রাসনে স্থানীয়ভাবে তৈরি মুন্ডির কদর অনেকটাই কমে যাচ্ছে বলে মুন্ডি হাউসের মালিকেরা জানান।
শহরের উজানীপাড়ায় রেঙ্গুন মুন্ডি হাউসের রুজি মারমা বলেন, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরেরাই বেশি মুন্ডি খাওয়ার জন্য আসে। এ জন্য মুন্ডি হাউসগুলো এখন তরুণ-তরুণীদের আড্ডা ও বিনোদনের স্থানে পরিণত হয়েছে।
ছোট ভাইকে নিয়ে মুন্ডি খেতে আসা তুম্পা চৌধুরী বলেন, ‘টক-ঝাল স্বাদের মুন্ডি একটি ব্যতিক্রমধর্মী খাবার। একবার খেলে বারবার খেতে ইচ্ছে করে। এ জন্য প্রায় সন্ধ্যায় মুন্ডি খেতে আসি।’
মুন্ডি হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লোকজনের আনাগোনা থাকলেও সন্ধ্যায় ভিড় বেড়ে যায়। মেসানু মারমা নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মারমা জনগোষ্ঠী প্রাচীনকাল থেকে মুন্ডি তৈরি করছে। ঐতিহ্যবাসী এই ঘরের খাবার এখন বিক্রি হচ্ছে রেস্তোরাঁয়ও। বংড মুন্ডি হাউসের পরিচালক শৈ মারমা বলেন, বান্দরবানে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও মুন্ডি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মুন্ডি হাউসের লোকজন জানান, চাল ভিজিয়ে রেখে ছোট ছিদ্রযুক্ত চালুনির ওপর চাপ প্রয়োগ করে নুডলসের মতো চিকন লম্বা মুন্ডি তৈরি হয়। সেগুলো সিদ্ধ করে গোলমরিচ ও পাহাড়ি মরিচের গুঁড়া, পেঁয়াজভাজা, ধনেপাতা, চিংড়ি ও শুঁটকিসহ নানা মসলা পরিমাণমতো মেশাতে হয়।
রুজি মারমা আরও বলেন, পরিবেশনের সময় মাছের ঝোল বা স্যুপ দিতে হয়। আগে নাপ্পির স্যুপ দেওয়া হলেও এখন মাছ অথবা চিংড়ি শুঁটকি দেওয়া হয়। তবে কেউ নাপ্পি খেতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও তাঁরা রাখেন।
খাওয়ার সময় সব উপকরণ দিয়ে মুন্ডিতে তেঁতুল অথবা লেবু মিশিয়ে খেতে হয়।