চলে গেলেন এখলাসউদ্দিন আহমদ

দেশের বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার এখলাসউদ্দিন আহমদ আর নেই। আজ বুধবার ভোর সাড়ে চারটায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। প্রথম আলোকে তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর ভাগনি-জামাতা শিশুসাহিত্যিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম।
আলী ইমাম বলেন, ‘তাঁর দুবার স্ট্রোক করেছিল। এক মাস ধরে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত সপ্তাহ থেকে তাঁকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তিনি অচেতন ছিলেন। গতকাল তাঁর জ্ঞান ফিরেছিল। সামান্য কথাও বলেছেন। কিন্তু আজ ভোর সাড়ে চারটায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন তিনি।’
আলী ইমাম জানান, বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণে এখলাসউদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেলে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হবে।
১৯৪০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন এখলাসউদ্দিন আহমদ। তাঁর বাবা আলাউদ্দিন আহমদ ও মা ফাতেমা খাতুন। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন এখলাসউদ্দিন। দীর্ঘদিন দৈনিক জনকণ্ঠে কর্মরত ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, ছড়া ও কিশোর উপন্যাস লিখেছেন। ১৩৭৩ বঙ্গাব্দে প্রথমে কিশোর সংকলন হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল ‘টাপুর টুপুর’। সেটির প্রধান সম্পাদক ছিলেন এখলাসউদ্দিন। এরপর নিয়মিত মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হতে শুরু করে ‘টাপুর টুপুর’। এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ছিলেন এখলাসউদ্দিন। আর সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ শফি। একঝাঁক শিশুসাহিত্যিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল ‘টাপুর টুপুর’। ১৩৭৯ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রকাশিত এর ষষ্ঠ বর্ষ চতুর্থ সংখ্যা ছিল সর্বশেষ সংখ্যা।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এখলাসউদ্দিন একুশে পদক পান ২০০০ সালে। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ যুব উৎসব পুরস্কার, বিশ্ব যুব উৎসব পুরস্কার (হেলসিংকি), বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ইউরো সাহিত্য পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন গুণী এ সাহিত্যিক।
এখলাসউদ্দিন রচিত গল্প ও উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘এক যে ছিল নেংটি’, ‘বেলুন বেলুন’, ‘মাঠ পারের গল্প’, ‘হঠাৎ রাজার খামখেয়ালী’, ‘তুনুর দুপুর’, ‘অন্য মনে দেখা’, ‘টাট্টুঘোড়া টাট্টুঘোড়া’, ‘রাজ রাজড়ার গপ্পো’, ‘তুনু ও কেঁদো বাঘের গপ্পো’, ‘তুনতু বুড়ির আজব সফর’, ‘কেঁদোর কাণ্ডকারখানা’, ‘তুনুকে নিয়ে গপ্পো’, ‘তুনতুর গপ্পো’, ‘রোজদিনকার রোজ-নামচা’, ‘যত্তোসব আজগুবি’, ‘তুনু ও তার ক্ষুদে বন্ধুদের গপ্পো’, ‘লোকটা’, ‘বঙ্কুবাবু ও মামদোর গপ্পো’, ‘তুনুর বন্ধু হালুম’, ‘তুনুর হারানো পুতুলগুলো’।
এখলাসউদ্দিন রচিত ছড়া ও কবিতার বইগুলোর মধ্যে রয়েছে— ‘হাসির ছড়া মজার ছড়া’, ‘তুনতু বুড়ির ছড়া’, ‘টুকরো ছড়ার ঝাঁপি’, ‘বাজাও ঝাঁঝর বাদ্যি’, ‘ইকরি মিকরি’, ‘বৈঠকী ছড়া’, ‘কাটুম কুটুম’, ‘ছোট রঙিন পাখি’, ‘প্রতিরোধের ছড়া’, ‘অষ্টাশির ছড়া’, ‘ছড়ানো ছিটানো ছড়া’, ‘বাছাই ছড়া’।
এ ছাড়া এখলাসউদ্দিনের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘টাপুর টুপুর’, ‘ছড়ায় ছড়ায় ছন্দ’, ‘রঙিন ফানুস’, ‘দুই বাংলার ছোটদের গল্প’, ‘দুই বাংলার ছেলে ভুলানো ছড়া’, ‘দুই বাংলার একালের ছড়া’, ‘হাজার বছরের কিশোর কবিতা’, ‘বাংলাদেশের ছোটগল্প’, ‘ফিরে দেখা’, ‘তিনতানীর গপ্পো’, ‘ভর সন্ধ্যে বেলা’, ‘তুনতু বুড়ির ইচ্ছাকাঠি’, ‘তপুর ভুবন’, ‘তপুর যুদ্ধ যুদ্ধে ফেরা’, ‘ডাকাতের মুখোমুখি’, ‘তপু ও চন্দ্রপরী’, ‘কেঁদোকে নিয়ে’, ‘কেঁদোর ছক্কি তুনুর ঘরে’, ‘কেঁদোর ভিত্তি’, ‘বাছাই ছড়া’, ‘হাদারামের ভূত দেখা’, ‘খুঁজে ফেরা’, ‘কেঁদো’, ‘দশটি কিশোর উপন্যাস’, ‘আলসে ভূতের গপ্পো’, ‘তুনু ও তার বন্ধুরা’, ‘ভূষণ্ডি ও কাকতাড়ুয়ার গপ্পো’, ‘তপুর হারানো দিনগুলো’, ‘তুনু ও তাকতুর গপ্পো’, ‘মেঘ বৃষ্টির গপ্পো’, ‘ছোটদের দশটি উপন্যাস’, ‘নির্বাচিত কিশোর উপন্যাস’, ‘জানালাটা খুলে দাও’, ‘গল্পগুলো অর্কের’, ‘তনুর ভালো লাগা না লাগা’, ‘তনু সমগ্র ১’, ‘এখলাসউদ্দিন আহমদের রচনা সমগ্র’ (১-৪)।