২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিয়ের বয়স কমতে পারে, বাল্যবিবাহে সাজা বাড়ছে

বিয়ের বিদ্যমান বয়স কমানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স ১৮ এবং মেয়েদের ১৬ করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহের অপরাধের জন্য সাজা সর্বোচ্চ দুই বছর ও জরিমানা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে।
বর্তমানে বাল্যবিবাহের সর্বোচ্চ সাজা তিন মাস এবং জরিমানা এক হাজার টাকা।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাজা ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সভা থেকে বিয়ের বয়স কমানো যায় কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ (অনুশাসন) দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্ত জানান।
আইনানুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীদের শিশু বোঝায়। মন্ত্রিসভায় উপস্থিত সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু এই আইনটি বাল্যবিবাহ নিয়ে, তাই এখানে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ না রেখে নিম্নে ১৮ বছর করার পক্ষে কেউ কেউ মত দেন। আবার কেউ কেউ মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর কথাও বলেন। বিষয়টি আইনি যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২১ থেকে ২৩ জুলাই লন্ডনে গার্ল সামিটে অংশ নিয়ে দেশে ফেরার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স বর্তমানে যা আছে, তা কমানো উচিত। এ ক্ষেত্রে তিনি যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬। আর বাংলাদেশে ১৮, যা একটু বেশি হয়েছে।
বর্তমানে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছরের কম হলে বাল্যবিবাহ বলা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা সামাজিক বাস্তবতা ও পরিবেশসহ প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিয়ের বয়স কমানো যায় কি না, তা বিবেচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাকে বলেছে।
বাল্যবিবাহের বিদ্যমান আইনটি ১৯২৯ সালের। এতে বাল্যবিবাহের সাজা ও জরিমানা কম। অন্যান্য ক্ষেত্রেও অসম্পূর্ণতা রয়েছে। এ জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করে। যেটি গতকাল নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলো। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত শেষে আবার সেটি মন্ত্রিসভায় উঠবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। এরপর বিলটি পাসের জন্য জাতীয় সংসদে উঠবে।
নতুন আইন অনুযায়ী, সাজা ও জরিমানা করবেন নির্বাহী হাকিম। তবে বিয়ে বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে পারিবারিক আদালতে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্ধারিত বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে।
যাঁরা বাল্যবিবাহের পরিচালনা করেন, যাঁরা বাল্যবিবাহের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বর-কনে এই দণ্ডের আওতায় পড়বেন। তবে অপরাধী নারী হলে শুধু আর্থিক দণ্ড হবে, কারাভোগ করতে হবে না।
আইনানুযায়ী বিয়ের বয়স বিবেচনা করা হবে জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট (থাকলে) বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সনদ দেখে। বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিট গ্রহণযোগ্য হবে না। বয়সের ক্ষেত্রে মিথ্যা সনদ প্রমাণিত হলে মিথ্যা সনদ প্রদানকারীরও দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হবে। বাল্যবিবাহের আয়োজনে সহায়তাকারী বিবাহ রেজিস্ট্রারের নিবন্ধন বাতিল করা করা হবে এবং সেই ব্যক্তিকেও একই রকম সাজা ও জরিমানা করা হবে। বিয়ের তথ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক তথ্যভান্ডার করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনানুযায়ী, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিটির কার্যাবলি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম আদালত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারবে। এই আইনের অধীন বাতিলকৃত বাল্যবিবাহের ফলে জন্মগ্রহণকারী শিশু বৈধ হবে এবং এই শিশুর নিরাপত্তা, হেফাজত ও ভরণপোষণের দায়িত্ব আদালত নির্ধারণ করবেন। এ ক্ষেত্রে শিশু আইন বিবেচিত হবে। তবে আদালত শিশুর নিরাপত্তা, হেফাজত ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নির্ধারণের সময় শিশুর বাবাকে দায়বদ্ধ করার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনা করবেন। এ ধরনের শিশুর বাবার আইনগত উত্তরাধিকারী হতে কোনো বাধা নেই।
আইনে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও সমাজকে সচেতন করার জন্য মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় কাস্টমস আইন-২০১৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগের আইন হালনাগাদ করে বাংলায় নতুন আইনটি করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে আমদানি ও রপ্তানিপণ্যের ঘোষণার পদ্ধতিতে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, যা নতুন আইনে সহজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আইনটি কার্যকর হবে ২০১৬ সালের জুলাই থেকে।