শিমুলিয়া ঘাটে মানুষের ঢল, যানবাহনের তীব্র জট

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল তোলা। ছবি: প্রথম আলো
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে ঈদে ঘরমুখো দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধিও। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী নৌপথে ঈদে ঘরমুখী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে।

ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রায় মাসখানেক ধরে শিমুলিয়া ঘাট হয়ে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেলায় সীমিত আকারে ফেরি চললেও রাতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া স্রোতের কারণে ফেরিগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। নদী পারাপারে তিন গুণের বেশি সময় লাগছে। যেখানে ঈদকে সামনে রেখে ১৭টি ফেরি চলাচল করার পরও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো, সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে মাত্র ১০টি ফেরি চলছে। এসব কারণে ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের জটলা বাড়ছে। যাত্রী ও পরিবহনচালকদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল চার শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন। এ ছাড়া নদী পার হওয়ায় অপেক্ষায় ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন শতাধিক মোটরসাইকেল। দুপুরের দিকে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমলেও বিকেল থেকে আবার বেড়ে যায়।

বিকেল চারটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শিমুলিয়া ঘাটের নৌপুলিশ ফাঁড়ির মাঠ যানবাহনে পূর্ণ। যাত্রীরা প্রচণ্ড গরমে মাঠে ও তাদের গাড়িতে বসে আছে। সবার চোখেমুখে অস্বস্তির ছাপ, এ ছাড়া ২ ও ৪ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ছিল।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের জটলা বেঁধে আছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের জটলা বেঁধে আছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

মোটরসাইকেলচালক আনিসুর রহমান জানান, তাঁর বাড়ি মাদারীপুর। তিনি নারায়ণগঞ্জে থেকে পড়াশোনা করেন। পাঁচ বছর ধরে মোটরসাইকেলে করে ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। তাঁর ভাষ্য, ‘মোটরসাইকেলের এমন জট জীবনেও দেখিনি।’ সবিতা বিশ্বাস নামে আরও এক মোটরসাইকেলযাত্রী বলেন, দোহার থেকে সকাল নয়টায় ঘাটে এসেছেন। যাবেন ফরিদপুর সালথা উপজেলায়। বিকেল হলেও তাঁরা ফেরিতে উঠতে পারেননি। ঈগল পরিবহনের যাত্রী শাহীন আলম বলেন, ‘ভোর ছয়টায় ঘাটে এসেছি। ঘাটে অনেক যানবাহন। আমাদের গাড়ি ফেরির সিরিয়াল পায়নি।’

সাতক্ষীরাগামী প্রাইভেটকারের যাত্রী রওশন আরা বলেন, ‘বাড়ির সবার সঙ্গে ঈদ করব বলে ভোরেই ঢাকা থেকে শিমুলিয়া ঘাটে এসেছি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে। ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আছি। কখন সিরিয়াল পাব জানি না।’ তবে যে করে হোক, নদী পার হবেন বলে জানালেন তিনি।

এদিকে স্পিডবোট ও লঞ্চে যাত্রী ওঠা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লক্ষ করা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে। তবে ভাড়া নিয়ে অভিযোগ ছিল না তাঁদের। নুরে আলম নামের বরিশালের এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে ভাড়া আগের মতোই নিচ্ছে। যাত্রীদের চাপ খুব বেশি। সবাই স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছে। এতে করোনার শঙ্কা বাড়ছে। এ সময় আরও কয়েকজন জানান, ভিড় থাকায় একটু হুড়াহুড়ি করেই লঞ্চে উঠতে হয়েছে। তবে নদী পার হয়ে বাড়ি যাবেন, এটা ভেবেই সব কষ্ট ভুল গেছেন তাঁরা।

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের ২ ও ৪ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ফেরিতে ওঠার অপেক্ষা করছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের ২ ও ৪ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে কয়েক শতাধিক মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ফেরিতে ওঠার অপেক্ষা করছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

তবে ভোগান্তিতে ছিলেন ট্রাকচালকেরা। বাগেরহাটগামী ট্রাকচালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন হলো ঘাটে এসেছি। আমাদের আটকে রেখে ছোট গাড়ি পার করল।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, যানবাহন পারাপারের জন্য ছোট-বড় ১০টি ফেরি চলছে। বিকেল নাগাদ দুই শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে। তবে ক্রমেই চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, পদ্মার পানিতে প্রচুর স্রোত, তাতে পলিও রয়েছে। পলি জমে চ্যানেলের মুখ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে স্রোতের কারণে ফেরি ঠিক পথে চলতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সন্ধ্যার পর ফেরি চলাচল বন্ধ থাকতে পারে।