অপেক্ষার যেন শেষ নেই তাঁদের
একটি সাইকেল, কোদাল ও ঢালি নিয়ে রোজ অপেক্ষায় থাকেন শাহাদ আলী (৫০)। গত এক সপ্তাহে মাত্র একদিন কাজ পেয়েছেন তিনি। তবুও কাজের অপেক্ষায় তাঁর বসে থাকা। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর নগরের উপকণ্ঠ কাঁটাখালি থানাধীন মল্লিকপুর গ্রামে। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জন করেন।
শাহাদ আলীর মতোই আরও কয়েক শ মানুষ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ পাওয়ার আশায় ভিড় জমান রাজশাহী নগরের বিভিন্ন মোড়ে। এই মানুষদের প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
গতকাল বুধবার শাদাত আলীকে পাওয়া গেল রাজশাহী নগরের এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে। ওই চত্বরে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে দুই শতাধিক দিনমজুর প্রতিদিন কাজের সন্ধানে আসেন।
মহামারি কোভিড-১৯ এর (করোনাভাইরাস) কারণে রাজশাহী শহর এখনো অনেকটা থমকে আছে। শহর ছেড়ে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীসহ কয়েক লাখ মানুষ এখনো ফেরেনি। নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজও সেভাবে এখনো গতি পায়নি। তাই শ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন না। ওই চত্বর ছাড়াও নগরের বর্ণালীর মোড়, তালাইমারী এলাকা, বিনোদপুর বাজারে এসব দিন মজুরের দেখা পাওয়া যায়। তাঁরা কাজের সন্ধানে এসে প্রায় প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন।
আব্দুস সাত্তার (৪৪) এসেছেন পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়ন থেকে। তিনি মঙ্গলবার কাজ না পেয়ে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলেন। গতকাল আবার এসেছেন। ঈদের আগে অন্তত একদিন তাঁর কাজ পাওয়া দরকার। বললেন, ঈদে সেমাই-চিনিটা তো কিনতে হবে।
এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভাগ্যবান বলা যায় পবা উপজেলার মো. সেলিমকে (৪৮)। তিনি সাত দিন এসে তিন দিন কাজ পেয়েছেন। কাজ পেলে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পান। তাঁর খুব অভাব। ঈদের আগে আরও অন্তত দুই দিন কাজ করতে পারলে ঈদটা কোনো রকমে পাড়ি দিতে পারবেন। সেলিম বলেন, মাস তিনেক ধরে তাঁদের কোনো কাজ নেই। গ্রামেও কিছুই করা যাচ্ছে না। তাই শহরে আসতে হয়। যদি একদিন কাজ পাওয়া যায়। তবুও চাল ডাল কিনে কোনো রকমে বেঁচে থাকা যাবে।
মোহনপুর উপজেলা থেকে আসা রবিউল হোসেন জানান, এক শ জনের মধ্যে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন ভাগ্যক্রমে কাজ পায়। বাকিদের দুপুরের মধ্যে ফিরে যেতে হয়।
গতকাল সকাল ৭টার আগে আরও কথা হয় আয়নাল হক, নুর আলম, সিদ্দিক মিয়াসহ অন্তত ২০ জন দিনমজুরের সঙ্গে। তাঁরা জানান, গত চার মাস ধরে তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মাঝে দেড় মাস বাড়ি থেকেই বের হতে পারেননি লকডাউনের জন্য। ওই সময় ৫-১০ কেজি করে চাল পেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার আগের সেই কাজ আর পাচ্ছেন না। এখন আর কেউ কারও খোঁজও রাখে না। এভাবে কত দিন চলা যায়!