মা-বাবার অপেক্ষা ফুরোয় না শিশু জোহানা ও সামান্থার

মা-বাবা সময় দিতে না পারায় বাসায় নিজেদের মতো করে সময় কাটায় শিশু জোহানা ও সামান্থা।  ছবি: সংগৃহীত
মা-বাবা সময় দিতে না পারায় বাসায় নিজেদের মতো করে সময় কাটায় শিশু জোহানা ও সামান্থা। ছবি: সংগৃহীত

চার বছর বয়সী সামান্থা, আর ছয় বছরের জোহানা। তাদের মা–বাবা দুজনই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা। করোনার এই সময়ে কর্মক্ষেত্রে তাঁদের দায়িত্ব বেড়েছে। করোনা রোগীদের কোয়ারেন্টিন করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে মা–বাবার সঙ্গ পাচ্ছে না ওই দুই শিশু।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসায় থাকছে শিশু সামান্থা ও জোহানা। তাদের বাবা মাহাবুবুর রহমান শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। মা তাসলিমা আলী মুকসুদপুরের ইউএনও। বাবা মাহাবুবুর গত এপ্রিলের পর আর বাড়িতে যাননি। সন্তানদের কাছ থেকে পুরোপুরিই বিচ্ছিন্ন। আর মা তাসলিমা আলী সকালে কর্মক্ষেত্রে যান, ফেরেন সেই রাতে। ফলে ঘরবন্দী দুই শিশুর সঙ্গী শুধু গৃহপরিচারিকা।

জোহানা মুকসুদপুর আইডিয়াল কেজি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। মুঠোফোনে সে বলছিল, ‘অনেক দিন আমি বাবার কাছে যাই না। দাদাবাড়িও যেতে পারছি না। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গেও খেলতে পারি না।’ 

সন্তানদের পাশে থাকতে না পারার কষ্টের কথা জানালেন মাহাবুবুর রহমান ও তাসলিমা আলী। তাসলিমা বলছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দায়িত্ব পালনে সব সময়ই সচেষ্ট থাকেন তিনি। তবু সতর্কতার অংশ হিসেবে সন্তানদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। রাতে বাসায় ফিরে সঙ্গে সঙ্গেই সন্তানদের কাছে যেতে পারেন না।

তাসলিমা আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আগে মেয়েদের সঙ্গে দুপুরে খাবার খেতাম। আমিই তাদের খাবার খাইয়ে দিতাম। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে প্রিয় সন্তানদের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। এটা অনেক কষ্টের। তবে সেই কষ্ট কিছুটা কমে যায়, যখন ভাবি দুর্যোগের এই সময়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি।’

শরীয়তপুর থেকে মুকসুদপুরের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবলে মন খারাপ হয়। কিন্তু এ দুর্যোগে আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করতে হচ্ছে। সন্তানেরা বাসায় নিরাপদে আছে, এটা ভেবে স্বস্তিতে থাকি। উল্টো ওরাও বারবার ফোন করে আমার খোঁজ নেয়। বারবার হাত ধুচ্ছি কি না, এমন নানা প্রশ্ন করে। তখন মনে হয় দূরে থাকলেও সন্তানদের কাছেই আছি।’