'মনে সাহস রাখাটাই আসল কথা'
>চট্টগ্রামের ছয় সদস্যের এক পরিবারের ৫ জনই আক্রান্ত হন। চারজন সুস্থ হলেও একজন এখনো হাসপাতালে।
একে একে ছাড়া পেলেন সবাই। বাবা, মা ও দুই ভাই বাড়ি ফিরলেন। রয়ে গেল কেবল মেয়েটি।
চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকা এলাকায় ছয় সদস্যের একটি পরিবারের পাঁচজন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। সবাই ছিলেন হাসপাতালে। বুধবার সুস্থ হয়ে প্রথম বাড়ি ফেরেন পরিবারের কর্তা পোশাক কর্মকর্তা বাবা। এরপর রোববার মা ও দুই ভাইও সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া মেয়েটি এখনো সুস্থতার সনদ পাননি। আরও কয়েক দিন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। সুস্থ হওয়া চার সদস্য সাগরিকার বাসায় ফিরে এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
পরিবারের প্রধান বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে, দুই ছেলে। সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়েটি ছাড়া আমরা সবাই করোনায় আক্রান্ত হই। আমরা আক্রান্ত হওয়ায় আমাদের ছোট্ট মেয়েটিকে কেউ আশ্রয় দিতে রাজি হচ্ছিল না। পরে ওর মামার কাছে রেখে যাই। তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। এখনো মেয়েটি সেখানে আছে।’ মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘বড় মেয়েটি হাসপাতালে আর ছোটটি তার মামার বাসায়।
আমরা আবার আগের মতো একসঙ্গে হব এ জন্য আল্লাহকে ডাকছি।’
পোশাক কর্মকর্তা এই ব্যক্তির ২ এপ্রিল থেকে জ্বর, কাশি ছিল। এর আগে তিনি নিয়মিত অফিসে এবং অফিসের কাজে বিভিন্ন জায়গায় গেছেন। কয়েক দিন জ্বরে ভোগার পর স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেওয়া হয়।
৮ এপ্রিল করোনা পজিটিভ আসায় সবার মন খারাপ হয়। ওই দিনই তিনি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।
পোশাক কর্মকর্তা জানান, তিনি ভাড়ার মোটরসাইকেলযোগে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি আক্রান্ত হন বলে ধারণা। এরপর তাঁর মাধ্যমে পরিবারের বাকি চার সদস্য সংক্রমিত হন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা সাহস দেন। তাঁরা সব সময় বলেছেন, ভালো হয়ে যাবেন। এরপর ঘরের অন্যরা যখন আক্রান্ত হয়, তখন আমি তাদের বলেছি মনে সাহস রাখতে। মনে সাহস রাখাটাই আসল কথা।
পোশাক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে নিয়মিত গরম পানি খেতেন। পাশাপাশি অন্যান্য ওষুধ দিতেন চিকিৎসকেরা। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে কিছু সময়ের জন্য তাঁকে অক্সিজেনও দেওয়া হয়েছিল। তখন কিছুটা ভয় পেয়েছিলেন। পরে অবশ্য সামলে নেন।
পোশাক কর্মকর্তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে ছেলে দুটি বড়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন মেয়েটি তৃতীয়। গত ১৪ এপ্রিল স্ত্রী, দুই ছেলে আর বড় মেয়ের কোভিড-১৯ পজিটিভ হন। গত রোববার এক মেয়েকে হাসপাতালে একা রেখে সুস্থ দুই ছেলেসহ বাড়ি ফেরেন মা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা জামাল মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি ছাড়া পরিবারটির সবাই সুস্থ হয়ে গেছে। মেয়েটিকে আরও কয়েক দিন থাকতে হবে।
জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাশাপাশি শয্যায় ছিলেন সবাই। পোশাক কর্মকর্তা বলেন, মনে জোর ছিল। আর একজন আরেকজনকে সাহস দিয়েছেন।
চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনাও ভালো।
বড় ছেলে বলেন, ‘বাবা সুস্থ হয়ে আসার সময় তাঁরা খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু নিজেরা রোববার ফেরার সময় বোনটির জন্য কষ্ট হচ্ছিল। আবার আরেক বোন মামার বাসায়। মন চাচ্ছে ওকে নিয়ে আসতে। কিন্তু পারছি না।’
করোনাজয়ী এই পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, করোনা হলেও মনে সাহস রাখতে হবে। আর চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী চলতে হবে।