বয়সের কাছে হার না-মানা যন্ত্রশিল্পী
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার যন্ত্রশিল্পী তারাপদ পাল (৮৮) বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রের সুরের মায়া ছাড়তে পারছেন না। পরিবারের লোকজনের বাধা না মেনে এখনো তিনি ছুটে যান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। জীবনসায়াহ্নে এসেও সুরের এই মানুষটি সুরের মাঝেই বেঁচে থাকতে চান।
গত শুক্রবার উপজেলার রায়গঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের ধানগড়া পালপাড়ায় তাঁর বাড়িতে বসে কথা হয়। রাধারমণ পাল আর রাজকুমারী পালের দুই সন্তানের মধ্যে বড় তারাপদ পাল। একমাত্র বোন অনেক আগেই মারা গেছেন। স্ত্রী নিতু রানী পালও বছর সাতেক আগে গত হয়েছেন। দুই ছেলে রামপদ পাল আর হরিপদ পালের সংসারে তাঁর বসবাস। ছেলেদের বউ আর নাতি-নাতনি নিয়ে ভালোই দিন কাটছে।
গান আর সুরের প্রতি তারাপদ পালের টান ছোটবেলা থেকেই। তিনি জানালেন, একসময় স্থানীয় ওস্তাদ বিপিন চন্দ্র বেহালচি ও দীনেশ চন্দ্র মালাকারের কাছে বেহালা, হারমোনিয়াম, সেতার, ঢোল-তবলা বাজানো শেখেন। যোগ দেন কীর্তনিয়া দলে। বিভিন্ন যন্ত্র বাজানোর জন্য ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, খুলনা ও ঢাকার নানা স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন।
বয়সের কারণে অনেক স্মৃতি আজ ফিকে হয়ে গেছে। সাল মনে নেই। বয়স তখন ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে হবে। ঢাকা ও রাজশাহী বেতারে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে অডিশন দেন তারাপদ পাল। কিন্তু অডিশনের ফলাফল জানার আগেই তাঁকে ফিরতে হয় বাড়ি। ফলে ওই পথে আর যাওয়া হয়নি। জীবিকার প্রয়োজনে পৈতৃক ব্যবসা মাটির তৈজস তৈরির কাজে ফেরেন তিনি। কিন্তু সুর আর গানের টানে আবার বাড়ি ছাড়েন তিনি।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে পরিচয় হয় পাশের দেশ ভারতের পশ্চিম বাংলার একজনের সঙ্গে। তাঁর আমন্ত্রণে যান সেখানে। পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্রে সুর তোলেন।
রায়গঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা একজন সদস্য তারাপদ পাল। বয়সের কারণে এখন আর গাইতে পারেন না তিনি। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখনো তিনি সুর তুলছেন। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির তরুণ শিল্পী অরুণ হালদার বলেন, ‘তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।’ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর মতো সুরের মানুষ এ এলাকায় কম।