৪৫ টাকা কেজি পেঁয়াজের জন্য লম্বা লাইন

বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। তাই টিসিবির ৪৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ কিনতে ভিড় করেছে মানুষ। গতকাল সকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে।  ছবি: প্রথম আলো
বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। তাই টিসিবির ৪৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ কিনতে ভিড় করেছে মানুষ। গতকাল সকালে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে। ছবি: প্রথম আলো

বাজারে ভালো মানের কোনো পেঁয়াজই প্রতি কেজি ১২০ টাকার নিচে নেই। সেখানে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পেঁয়াজ বিক্রি করছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়। ফলে দেশজুড়ে লাইন ধরে পেঁয়াজ কিনছেন মানুষ।

ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও ময়মনসিংহে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। পেঁয়াজ কিনতে যাওয়া মানুষের অনেককে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতেও ফিরতে হয়েছে। কিছু জায়গায় লাইনে দাঁড়ানো মানুষের বদলে অনিয়ম করে অন্যদের পেঁয়াজ দেওয়া নিয়ে বচসাও হয়েছে।

এদিকে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না। ঢাকায় এখন প্রতি কেজি দেশি পুরোনো পেঁয়াজ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০, মিসরীয় পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৬০ ও চীনা পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ঢাকার বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ এসেছে। অপরিপক্ব এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকার আশপাশে। টিসিবিরই হিসাবে বাজারে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এখন পেঁয়াজের দর ৫৩৬ শতাংশ বেশি।

রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। পালা আসতে আসতে পেঁয়াজ শেষ হয়ে যাবে বলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে চলে যেতে দেখা গেছে অনেককে।

সোহেল মিয়া নামের এক ক্রেতা তালাইমারীতে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পেঁয়াজসহ অন্য পণ্য না পেয়ে সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তালাইমারীতে বিক্রি শেষ। তাই তিনি জিরো পয়েন্টের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সেখানেও লম্বা লাইন, না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টিসিবির স্থানীয় কর্মচারীরা জানান, পেঁয়াজের মজুত ফুরিয়ে গেছে। তাই আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি হবে না। কাল শুক্রবার পেঁয়াজ এনে শনিবার তা বিক্রি করা হবে।

>

বাজারে দাম কমছে না। সবচেয়ে বেশি দর দেশি পেঁয়াজের, কেজি ২৪০-২৫০ টাকা। চীনা প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকা।

টিসিবি গত ২১ নভেম্বর খুলনায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এরপর থেকে প্রতিদিনই নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

গতকাল নগরের ময়লাপোঁতা মোড়ে বেলা তিনটায় গিয়ে দেখা যায়, তখনো শ খানেক মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একজন ক্রেতা এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। আশরাফুল আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘দুই ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এক কেজি পেঁয়াজ পেয়েছি।’

সিলেট নগরে সাতটি জায়গায় পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। ক্রেতাদের অভিযোগ, মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও পরিবেশকেরা বিশৃঙ্খলভাবে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। জনপ্রতি সর্বোচ্চ দুই কেজি পেঁয়াজ দেওয়ার কথা থাকলেও পরিবেশকের পরিচিতদের চার-পাঁচ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে।

ময়মনসিংহ শহরের কাচারিঘাট ও বাতিরকল এলাকায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকেই পেঁয়াজ শেষ হয়ে যায়। কাচারিঘাট এলাকায় তসলিম মিয়া নামের একজন দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও পেঁয়াজ কিনতে না পেরে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর দাবি জানান।

প্রতি ট্রাকে টিসিবি এক হাজার কেজি পেঁয়াজ দেয়। একজন দুই কেজি করে নিতে পারেন। ফলে ৫০০ জনকে দেওয়ার পর পেঁয়াজ থাকে না। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় গতকাল ৫৭টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৫০টি। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর ও বেশির ভাগ জেলায় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। আপাতত বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা সহায়তা করেছেন]