ডিএসসিসির নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল, কাচ ভাঙচুর
পৃথক দুটি পদে নেওয়া হবে ৭৫০ জন কর্মী। এ জন্য সাক্ষাৎকার দিতে হাজির হন তিন হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী। অথচ এত প্রার্থীর সাক্ষাৎকারের জন্য বোর্ড গঠন করা হয় মাত্র একটি। এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বোর্ডে মাত্র ১০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ নিয়োগপ্রার্থীরা দরজা–জানালা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের ধাক্কাধাক্কি হয়।
গতকাল শনিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে এ ঘটনা ঘটে। ডিএসসিসির সচিবের দপ্তর সূত্র জানায়, গত ২৪ নভেম্বর ‘কাজ করলে মজুরি, না করলে নেই’ ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে ৭৫টি দক্ষ ও ৬৭৫টি অদক্ষ পদে শ্রমিক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসসিসি। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় প্রথম পর্বের সাক্ষাৎকারের দিন ধার্য ছিল। পরীক্ষা দিতে হাজির হন তিন হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী। দ্বিতীয় পর্বের সাক্ষাৎকার হবে ৭ ডিসেম্বর।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, গতকাল সকাল সাতটার পর থেকেই সাক্ষাৎকারের জন্য নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে লাইনে দাঁড়ান তাঁরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল নয়টার দিকে শতাধিক প্রার্থীকে ‘সিরিয়াল নম্বর’ দেয় ডিএসসিসি। নিয়োগ বোর্ড বসে ব্যাংক ফ্লোর সভাকক্ষে। ১০টা বাজতেই একজন করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে নিয়োগ বোর্ড। প্রার্থীদের কাগজপত্র ও শারীরিক পরীক্ষা করতে একজন প্রার্থীর জন্য গড়ে পাঁচ মিনিট করে সময় লেগে যায়। এতে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ জনের মতো প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে পারে বোর্ড। বাকিরা লাইনে দাঁড়িয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি ও ডিএসসিসির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এ সময় ডিএসসিসির কয়েকজন কর্মচারী দুই শতাধিক প্রার্থীর আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সেসব আবেদনপত্র নগর ভবনের সামনের ফাঁকা জায়গায় ছুড়ে ফেলে দেন তাঁরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাংক ফ্লোরের ৮ থেকে ১০টি কাচ ভাঙচুর করেন প্রার্থীরা। এতে বাধা দিলে আনসার সদস্যের সঙ্গে তাঁদের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন নিয়োগ বোর্ড তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
পরে বেলা দুইটার দিকে নগর ভবন ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশের রাস্তায় চেয়ার-টেবিল নিয়ে আবার বসে নিয়োগ বোর্ড। বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মো. ইমদাদুল হক। বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দুই শতাধিক প্রার্থী। বোর্ড একে একে নিয়োগপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য গড়ে চার মিনিট করে সময় নেওয়া হচ্ছে।
সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকারের অপেক্ষায় ছিলেন হাসান মিয়া। তিনি বলেন, দুপুরে হট্টগোলের পর অধিকাংশ আবেদনপ্রার্থী সাক্ষাৎকার না দিয়ে ফিরে গেছেন। তাঁরা আগামী ৭ ডিসেম্বর আবার সাক্ষাৎকার দিতে আসবেন। সেদিন যদি নিয়োগ বোর্ডের সংখ্যা বাড়ানো না হয়, তাহলে একই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের কোনো সদস্য কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিব দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত এ ধরনের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ছয় থেকে সাতটি নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। কিন্তু একটি বোর্ড করতে গিয়ে এই ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫৯৭ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাঁরা।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘এই নিয়োগের সাক্ষাৎকার নিয়ে হট্টগোলের কথা শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। ৭ ডিসেম্বর কোনো ঝামেলা ছাড়াই যাতে সবার সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব হয়, তার ব্যবস্থা করব।’