দেদার গড়ে উঠেছে ইটভাটা
গাজীপুরের প্রায় ৮০ ভাগ ইটভাটাই অবৈধ। ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া চলা এসব ভাটায় প্রতিবছর হাজার টন কাঠ পোড়ানো হয়। এ জন্য উজাড় হচ্ছে বন। প্রায় অর্ধেক ইটভাটাই সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছে। সবগুলোই অবৈধ। প্রায় একই দশা রাজধানীর পাশের আরেক জেলা নারায়ণগঞ্জের। সেখানেও ৩০ ভাগের বেশি ভাটা অবৈধ। পৌরসভা এলাকা এবং কৃষিজমির পাশে গড়ে তোলা এসব ভাটার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
গাজীপুরে ইটভাটা রয়েছে ৩৫২টি। এর মধ্যে ২৭৪টি অবৈধ। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭৩টি ভাটাই অবৈধ। এ ছাড়া শ্রীপুর উপজেলার ২২টি ভাটার মধ্যে ১২টি, কালিয়াকৈরের ৪১টির মধ্যে ২২টি, কাপাসিয়ায় ৩৪টি ভাটার ২৮টি, কালীগঞ্জে ২২টির মধ্যে ১৮টি অবৈধ। আর সদর উপজেলায় ইটভাটা আছে ৬০টি, যার ২১টি অবৈধ।
রাজধানীর বায়ুদূষণ কমাতে ঢাকা ও এর পাশের চারটি জেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ সব ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেন।
গত দুই দিনের সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘিয়া, কাতলাখালী, জয়েরটেক, আহাকী ও রাজাবাড়ী এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাইমাইল, সিটির সালনা, নছের মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ইটভাটা। অধিকাংশ ভাটার অবস্থান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার পাশে।
জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে ভাটা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ভাটার মালিক তা আমলে নেননি। আদালতে রিট করে এবং স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে সিটি করপোরেশন এলাকার শতাধিক ভাটা।
গেল বর্ষা মৌসুমে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক ইটভাটা এমনিতেই বন্ধ ছিল। এসব নিচু এলাকার পানি সরে যাওয়ায় ফের ভাটাগুলো চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন মালিকেরা। এরই মধ্যে অনেক ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। গত বুধবার গাজীপুর বাইমাইল, আহাকী ও রাজাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এমজেবি ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় মালেক সরকার ও সামছুল ইসলামের বিএবি ভাটায় আগুন জ্বালিয়ে ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে। আশপাশের অন্য ভাটার মালিকেরাও ইট পোড়ানোর জন্য ভাটা প্রস্তুত করেছেন।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুস সালাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এবার ৫০টির বেশি ভাটার মালিকেরা ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। গত মৌসুমে ৪২টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ভাটা ভেঙে দেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বক্তাবলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার চিমনির কালো ছড়িয়ে চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেখানে বৈধ-অবৈধ সব ধরনের ইটভাটা থেকেই কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। জিগজ্যাগ কাঠামোতে তৈরি বৈধ ইটভাটাগুলো থেকে কালো ধোঁয়া কম বের হতে দেখা গেছে।
সান ইটভাটার শ্রমিকেরা জানান, প্রতিদিন তাঁদের ইটের ভাটায় সাড়ে তিন টন কয়লা পোড়ানো হয়। পোড়ানো হয় ৩০ হাজার ইট। জিগজ্যাগ ইটভাটাগুলোতে কালো ধোঁয়া বের হওয়া প্রসঙ্গে শ্রমিকেরা জানান, কয়লা দেওয়ার সময় জিগজ্যাগ থেকেও প্রথম ১ থেকে ৫ মিনিট কালো ধোঁয়া বের হবে। পরে আর কালো ধোঁয়া বের হবে না। আধঘণ্টা পর ভাটার চুল্লিতে নতুন করে কয়লা দেওয়া হয়।
ইটভাটার কালো ধোঁয়ার গ্যাসে মাথা ঘোরানো, শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন আশপাশের এলাকার লোকজন। পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের পরিদর্শক মঈনুল হক জানান, জেলায় চার শতাধিক ভাটা আছে। এর ৩০ ভাগের বেশি অবৈধ। কালো ধোঁয়া বের হওয়ায় রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে দুটি ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।