'কাছে আসছে' দূর নক্ষত্র
প্রতিটি শিশুর কাছেই রহস্যঘেরা মহাকাশ আশ্চর্যরকম কৌতূহলের বিষয়। সে কারণেই কি না, মা শিশুকে ঘুম পাড়ান ‘চাঁদের বুড়ির’ চরকা কাটার গল্প শুনিয়ে। আবার গল্পে–কবিতায় শিশুদের কাছে সূর্য হাজির হয় ‘মামা’ হিসেবে। আকাশ থেকে ‘তারা খসে পড়া’ দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এবার মহাকাশের অনন্ত নক্ষত্রবীথি আর জানা–অজানা নানা গ্রহ–উপগ্রহ টেলিস্কোপের মাধ্যমে আরও কাছে দেখার সুযোগ পাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার শিশু–কিশোরেরা। এ জন্য শক্তিশালী টেলিস্কোপসহ অবজারভেটরি ভ্যান পৌঁছে যাবে তাদের দোরগোড়ায়।
বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠন ও বিজ্ঞানশিজ্ঞাকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। এ জন্য ‘ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও বিজ্ঞানশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্প’–এর আওতায় জাদুঘরে নতুন দুটি অবজারভেটরি ভ্যানের পাশাপাশি আনা হয়েছে তিনটি চতুর্মাত্রিক মুভি বাস।
গত ১৬ অক্টোবর জাদুঘর প্রাঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ভ্রাম্যমাণ বাসের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিবন্ধনসংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে বাসগুলো এখন দেশের সব প্রান্তে যাওয়ার জন্য তৈরি। তবে পরীক্ষার মৌসুম হওয়ায় এখনই যাত্রা শুরু করা যাচ্ছে না। আপাতত ভ্রমণসূচি তৈরির কাজ চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও বিজ্ঞানশিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ও জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর এ এস এম শফিউল আলম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত দূরের যাত্রায় না গেলেও জাদুঘরে রাখা মুভি বাস ও অবজারভেরটি ভ্যানগুলো সব দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এগুলো ঘুরে দেখেছে।
সম্প্রতি একটি মুভি বাসে উঠে দেখা যায়, একেকটি বাসে বিশেষভাবে নির্মিত আসনসংখ্যা ২০টি। প্রতিটি আসনের সঙ্গে একটা করে ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি) হেডসেট লাগানো। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান ও মহাকাশবিষয়ক চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্য চিত্রগুলো সরাসরি ইন্টারনেট থেকে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া চলচ্চিত্র উপভোগের সময় এর বিষয়বস্তুকে আরও বাস্তব করে তোলার জন্য আসনগুলোয় ঝাঁকুনি তৈরির সঙ্গে পানি ছিটানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
অবজারভেটরি ভ্যান প্রসঙ্গে সিনিয়র কিউরেটর এ এস এম শফিউল আলম তালুকদার বলেন, ভ্যানটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে রহস্যঘেরা মহাকাশ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ধারণাটুকু দেওয়া যায়। যে কারণে সৌরজগতের গ্রহ–উপগ্রহগুলো পর্যবেক্ষণের জন্য ভ্যানে বসানো হয়েছে তিনটি শক্তিশালী টেলিস্কোপ। সূর্যকে আলাদা করে দেখার জন্য সংযোজন করা হয়েছে সোলার টেলিস্কোপ। এ ছাড়া অবজারভেটরি ভ্যানে আছে একটি করে বহনযোগ্য প্লানেটরিয়াম, যেখানে কৃত্রিম আকাশ তৈরি করে নভোমণ্ডলের গ্রহ–উপগ্রহগুলোর অবস্থান ও গতিবিধি দেখানো যায়।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আওতায় আগে থেকেই একটা করে মোবাইল মিউজুবাস (বিজ্ঞানের প্রধান প্রধান পাঁচটি শাখার নানা প্রদর্শনী বস্তুসংবলিত) ও মুভিবাস চালু ছিল, যা সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু মাত্র দুটি বাস দিয়ে সবার চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। যে কারণে নতুন করে আরও তিনটি মুভিবাস ও দুটি অবজারভেটরি বাস সংযোজন করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় আরও চারটি মিউজুবাস সংযোজনের প্রক্রিয়া চলছে।
জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আধুনিক সব প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করে তুলতে ১৯৯০ সালে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে এর আগে ১৯৬৬ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকার গণগ্রন্থাগারে এ দেশের প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক জাদুঘরের যাত্রা শুরু।