ঢাকা ওয়াসাকে ভাবমূর্তি ধোয়ামোছা করতে বলা হয়েছে
সুপেয় পানি, জলাবদ্ধতা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সংসদীয় কমিটির প্রশ্নের মুখে পড়েছে ঢাকা ওয়াসা। বিশেষ করে সুপেয় পানি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তিনি কমিটিকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ সুপেয় পানি নিশ্চিত করা হবে। কমিটি ওয়াসাকে নিজেদের ভাবমূর্তি ধোয়ামোছা করতে বলেছে।
গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে ঢাকা ওয়াসা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ওয়াসার কার্যক্রম নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ১৮টি প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। ওয়াসা দাবি করে, যেসব প্রতিবেদন গণমাধ্যমে এসেছে, সেগুলো সঠিক নয়। এসব প্রতিবেদনের বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। তখন কমিটি জানতে চেয়েছে, কতটি প্রতিবাদ ছাপা হয়েছে। এর কোনো সদুত্তর ওয়াসা দিতে পারেনি। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) পক্ষ থেকেও ওয়াসার কার্যক্রম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য এসেছে। কমিটির একাধিক সদস্য ওয়াসার পানির মান নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। ওয়াসার এমডিকে এককভাবে সব দায়িত্ব পালন না করে সবার মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পরামর্শ দেয় সংসদীয় কমিটি।
কমিটির একজন সদস্য বলেন, ওয়াসার নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে সরকারকে বিব্রত হতে হচ্ছে। সংসদীয় কমিটিও বিব্রত হচ্ছে। তাই ঢাকা ওয়াসার নেতিবাচক ভাবমূর্তি কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আগে নিজেদের ভাবমূর্তি ধোয়ামোছা করতে হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা ওয়াসার নিয়মিত অডিট নিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন যে ১২ দফা সুপারিশ দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্ষার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজের দায়িত্বভার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসা বলেছে সুপেয় পানির লাইনগুলো পুরোনো, অনেক জায়গায় ফুটো দিয়ে বাইরের পানি ঢুকে, অনেকের ট্যাঙ্কে ময়লা থাকে। এসব কারণে ওয়াসা সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও সবাই তা পায় না। কমিটিও এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করেনি। তবে যতটুকু সম্ভব লাইন পরিবর্তন করতে বলেছে কমিটি। কমিটি এমডিকে একা সব না করে দলগতভাবে কাজ করতে পরামর্শ দিয়েছে।
বৈঠকে ওয়াসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৩২টি অডিট আপত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪৯টি নিষ্পত্তি হয়েছে। তবে কার্যপত্রে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের পর অডিটের বিষয়ে কোনো তথ্য তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিস্তারিতও উল্লেখ করা হয়নি। কমিটি এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে।
কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য ইসমাত আরা সাদেক, মাহবুব উল আলম হানিফ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও মুহিবুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।