টেকনাফে পৃথক 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত ২
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য, নিহত দুজন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলা সদরের মেরিন ড্রাইভ-সংলগ্ন মহেশখালীয়াপাড়া নৌকাঘাট ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মদিনার জোড়া নাফ নদীর তীরে এই ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন টেকনাফ সদরের ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আজিজ (২৪) ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কানঞ্জরপাড়ার মোহাম্মদ রহিম উদ্দিন ওরফে রফিক (৩৭)।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান প্রথম আলোকে এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে পুলিশ মোহাম্মদ আজিজকে আটক করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের একটি দল দিবাগত রাত ১২টার দিকে টেকনাফের মহেশখালীয়াপাড়া নৌকাঘাটে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধারে অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজিজের সহযোগীরা গুলি ছোড়েন। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। মাঝখানে পড়ে আজিজ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যান। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আজিজকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য আজিজকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর আজিজকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। তাঁর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাস্থল থেকে ৩ হাজার ইয়াবা বড়ি, ১টি দেশি অস্ত্র (এলজি) ও ৭টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজিবির ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং বিজিবির একটি বিশেষ টহলদল নাফ নদীর মদিনার জোড়া এলাকায় অভিযানে যায়। কয়েকজনকে নৌকা নিয়ে মিয়ানমার থেকে নাফ নদী অতিক্রম করে আসতে দেখেন বিজিবির সদস্যরা। নৌকাটি নদীর তীরে এলে বিজিবির সদস্যরা চ্যালেঞ্জ করেন। সেখান থেকে বিজিবির টহলদলকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। এতে বিজিবির দুই সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয় পক্ষের মধ্যে ৭-৮ মিনিট ধরে গুলিবিনিময় হয়। নৌকায় থাকা কয়েকজন দ্রুত পালিয়ে যান। পরে বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থল তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
বিজিবির ভাষ্য, ঘটনাস্থল থেকে ৬০ হাজার ইয়াবা, ১টি দেশি বন্দুক, ৩টি তাজা কার্তুজ ও ২টি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শংকর চন্দ্র দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ ও বিজিবি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আজিজ ও রফিককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁদের শরীরে গুলির একাধিক চিহ্ন দেখা যায়।
গত বছরের ৪ মে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কক্সবাজার জেলায় ৩ নারীসহ ১৮২ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২ নারীসহ ৪৭ জন রোহিঙ্গাও রয়েছেন।