স্কুলছাত্র খুনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা জড়িত?
চট্টগ্রামে স্কুলছাত্র জাকির হোসেন সানিকে খুনের ঘটনায় নগরের ওমর গণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত দাবি করেছে সানির পরিবার। নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরসহ ৫১ জনের নাম মামলার এজাহারে নতুন করে যুক্ত করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন মামলার বাদী ও নিহত সানির বোন মাহমুদা আক্তার।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিন আবেদনটি দেখে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে গত মাসে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এক আসামি এমইএস কলেজের জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চুর অনুসারী দাবি করেছেন নিজেকে।
আদালতে করা আবেদনে বাদী উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন শোকে কাতর থাকায় তাঁর ভাইকে খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার নাম এজাহারে দিতে পারেননি। পরে জানতে পারেন এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে জড়িত। মামলার মূল আসামিদের সঙ্গে নেতাদের ঘটনার দিন মুঠোফোনে একাধিকবার কথা হয়। নগরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে তাঁরা নিহত সানির পিছু নিয়েছিলেন। তাই ৫১ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হোক। অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ থেকে ১২ জন রয়েছেন।
আবেদনে অভিযুক্ত করা হয় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এমইএস কলেজের জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু, ছাত্রলীগের নেতা মো. মিনহাজ, মো. নাজমুল, মো. তারেক, মো. জাবেদ, মো. রাহীসহ ৫১ জনকে। সবাই আরশেদুল আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে এমইএস কলেজের জিএস আরশেদুল আলম বাচ্চু গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত সানিসহ আসামিদের কাউকে আমি চিনি না।’ ফয়সাল নামের এক আসামি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমইএস কলেজে তাঁর অনুসারী হিসেবে বলার কথা উল্লেখ করলে আরশেদুল বলেন, ‘অনেকেই গ্রুপ করে। সবাইকে চিনি না। ষড়যন্ত্র করে কেউ নাম বলতে পারে।’ তিনি নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক।
হত্যা মামলায় নিজের নাম সম্পর্কে জানতে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
গত ২৬ আগস্ট দুপুরে নগরের খুলশী থানার ওমর গণি এমইএস কলেজ গেটের বিপরীতে সানিকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। সাদা শার্ট পরিহিত স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিছু ছেলে তাকে ধাওয়া করে ছুরিকাঘাত করার দৃশ্য রয়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায়। নিহত সানি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিনের শ্যালক। ঈদুল আজহার আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিল সে।
ঢাকার মিরপুরে একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত সানি। ঢাকায় যাওয়ার দুই বছর আগে চট্টগ্রামে বোনের বাসায় থাকত। ওই সময় নগরের সারমন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ত সে। হত্যার ঘটনায় সানির বড় বোন মাহমুদা আক্তার বাদী হয়ে খুলশী থানায় মামলা করেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে সানির পরিবারের করা আবেদনটি খুলশী থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী জানান, আদেশটি তাঁরা এখনো পাননি।
মামলার বাদী ও নিহতের বড় বোন মাহমুদা আক্তার বলেন, আদরের ছোট ভাইকে খুনের সঙ্গে জড়িত যারা তাদের বিচার চান।