৯০ টাকার কলায় ১৪ টাকা কর
বান্দরবানের থানচিতে কৃষকেরা আকার ভেদে এক ছড়া কলা বিক্রি করেন ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। কিন্তু সেই কলা ট্রাকে পরিবহন করে শহরে আনার সময় চার দফায় কর দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে প্রতি ছড়া কলায় কর দাঁড়ায় ১০ থেকে ১৪ টাকার মতো। কেবল কলা নয়, থানচিতে উৎপাদিত সব কৃষিপণ্য পরিবহনের সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চার দফা কর আদায় করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে কৃষিপণ্য কিনে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। করের বোঝা এসে পড়ছে দরিদ্র কৃষক ও বাগানিদের ওপর।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সমন্বিত উদ্যোগে কেবল জেলা পরিষদের কর আদায়ের সরকারি নির্দেশনা আছে। তবে থানচিতে প্রতি ট্রাক কৃষিপণ্যের জন্য প্রথমে এক দফা কর আদায় করে জেলা পরিষদ। এরপর উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে আরও এক দফা কর দিতে হয়। বান্দরবান জেলার সীমানা পার হওয়ার সময় সুয়ালক এলাকায় আবারও জেলা পরিষদ ও পৌরসভাকে দুই দফা কর দিতে হয়। সব মিলিয়ে ট্রাক প্রতি কৃষিপণ্যের জন্য কর আদায় হয় সাড়ে নয় হাজার টাকা। বাড়তি এই করের কারণে ব্যবসায়ীরা কৃষিপণ্য কিনছেন কম দামে। এতে ন্যায্য দাম থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি ট্রাক কলা, কাজুবাদাম, জাম্বুরা, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য জেলা পরিষদ ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং উপজেলা পরিষদ ৪ হাজার টাকা নিচ্ছে। এতে এক ট্রাক কৃষিপণ্যের জন্য সাড়ে ৭ হাজার টাকা কর থানচি উপজেলায় দিতে হচ্ছে। সেই একই পণ্যের ট্রাক জেলার সীমানা অতিক্রমের সময় সুয়ালকে আবার জেলা পরিষদ ও পৌরসভা ১ হাজার করে ২ হাজার টাকা আদায় করছে।
থানচির কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী মাহমুদ আলী ও তৌহিদুল ইসলাম বলেছেন, এক ট্রাক পণ্যে থানচি থেকে চট্টগ্রামে পরিবহন করতে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কর দিতে হচ্ছে। একটি ট্রাকে ৭০০ থেকে ৯০০ ছড়া কলা পরিবহন করা সম্ভব। সেই হিসাবে এক ছড়া কলায় সাড়ে ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা। ভাড়া বাবদে প্রতি ছড়া কলায় ১৫ থেকে ২২ টাকা খরচ হয়ে যায়।
কৃষকদের দাবি, করের টাকা ও ট্রাকের পরিবহন ভাড়া পরোক্ষভাবে দিচ্ছেন পণ্য উৎপাদনকারী কৃষকেরা। কারণ, পণ্য কেনার সময় ব্যবসায়ীরা সেই টাকা বাদ দিয়ে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন। এতে কৃষক পণ্যের দাম কম পাচ্ছেন।
থানচি বাজারের ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেছেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কৃষকেরা এখন কৃষি উৎপাদনে মনযোগ দিয়েছেন। বর্ষা মৌসুমে কলা, পেঁপে, জাম্বুরা পাওয়া যায় বেশি। বর্ষা শেষে কলা ছাড়াও আদা, হলুদ, কাজুবাদাম, তিল, তুলা, ভুট্টাসহ কৃষিপণ্য থানচি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। পরিবহন কর কমালে কৃষকেরা আরও বেশি উৎপাদনে উৎসাহী হবেন।
থানচি উপজেলা সদর বাজারে গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, রেমাক্রি, বড়মদক, তিন্দু, বোর্ডিংপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কলা, জাম্বুরাসহ কৃষিপণ্য ছোট গাড়ি ও যন্ত্রচালিত নৌকায় করে বাজারে এনেছেন কৃষকেরা।
কৃষক মংম্যা মারমা বলেছেন, তিনি রেমাক্রি থেকে কলা নিয়ে এসেছেন। আকার ভেদে প্রতি ছড়া কলা গড়ে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করেন। আগে গড়ে প্রতি ছড়া ১০০ থেকে ১২০ টাকায় ব্যবসায়ীরা কিনতেন। কিন্তু গত বছর থেকে করের হার বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে করের বোঝা কৃষকদের বহন করতে হচ্ছে।
রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমা বলেছেন, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কর আদায়ের দায়িত্ব জেলা পরিষদের। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদকে করের একাংশ দেওয়ার কথা। কিন্তু জেলা পরিষদ কর আদায় করলেও উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের অংশ দেয়নি। এ জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ আলাদাভাবে একসঙ্গে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চার ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের টোলপয়েন্ট প্রায় ২৪ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা বলেছেন, দুটি সংস্থা থেকে কর আদায় করা হলেও অতিরিক্ত করের বিষয়টি সঠিক নয়। সব দিক বিবেচনা করে করের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সদস্য ও কৃষি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ক্যসাপ্রু মারমা বলেছেন, জেলা পরিষদেরই কর আদায় করার কথা। তবে উপজেলা পরিষদের কর আদায়ের বিষয়টি জানা নেই। বিষয়টি খবর নিয়ে কী করা যায় তা দেখবেন।