পাহাড়ের ফল চিনাল
অনেকে বাঙ্গি ভেবে ভুল করতে পারেন। কিন্তু ফলটির নাম চিনাল।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের ঢালুতে এ ফলের আবাদ হয়। সুস্বাদু বলে চিনালের বেশ কদর রয়েছে।
চিনালকে পাহাড়িরা সম্প্রদায়ভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে। চাকমারা চিন্দিরা, মারমারা সুগুসি ও ত্রিপুরা থাইচুমু নামে ডাকে। সমতলের মানুষ চেনে চিনাল নামে। এ ফলের চাষ হয় পাহাড়ের তিন জেলাতেই।
এখন চিনালের মৌসুম। জুমচাষিরা বিভিন্ন সড়কের ধারে, গ্রামের দোকান ও বাজারে বিক্রি করার জন্য এই ফল নিয়ে আসেন। বিক্রিও হয় বেশ।
চিনাল কাঁচাও খাওয়া যায়। কাঁচা খেতে অনেকটা শসার মতো। তবে স্বাদ আলাদা। আর পাকা চিনাল লাল, সবুজ, কমলা ও হলুদ রঙের হয়। পাকা ফল বেশ সুগন্ধযুক্ত, খেতে হালকা মিষ্টি। সবজি ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়।
পাঁচ–ছয় প্রকার চিনাল রয়েছে। কোনোটি লম্বা, কোনোটি গোলাকার। একেকটি গাছে পাঁচ থেকে ছয়টি ফল হয়। একটি পাকা চিনালের ওজন আধা কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
বলা হয়ে থাকে, চিনালে চিনির পরিমাণ সহনীয় থাকায় ডায়াবেটিসে কোনো ক্ষতি হয় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এপ্রিল বা মার্চ মাসের শুরুতে বৃষ্টি হলে জুমে গর্ত খুঁড়ে বীজ বপন করা হয়। ধান, তিল, ভুট্টা, মরিচ, শিম, বেগুনসহ অন্তত ২০ থেকে ৩০টি সবজির সঙ্গে মিশিয়ে চিনালের বীজ বপন করা হয়। ধান, বেগুন ও মরিচ গাছের নিচে চিনালের লতা মাটি বেয়ে ফল দেয়। বীজ বপনের তিন মাস পর ফুল ও ফল ধরে। আর পাঁচ মাস পর ফল পাকা শুরু করে।
বাঘাইছড়ি সাজেক ইউনিয়নে জুমচাষি কালাধন চাকমা ও শান্তিময় চাকমা চিনালের চাষ করেন। সম্প্রতি তাঁদের খেতে গেলে তাঁরা বলেন, জুমের চিনাল একসময় বিক্রি হতো না। এখন পাকা চিনালের চাহিদা বেশি, দামও বেশি। প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু পাহাড়ে বিভিন্ন হাটবাজারগুলোতে নয়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারেরা নিয়ে যাচ্ছেন। এই দুই চাষি এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকার চিনাল বিক্রি করেছেন। আরও এক মাস পাকা চিনাল বিক্রি করা যাবে।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, চিনাল মূলত জুমে মিশ্র সবজির সঙ্গে চাষ করা হয়। তবে এককভাবে চাষ ভালো হয় না। জুমচাষের ধান ও অন্যান্য সবজির সঙ্গে চিনালের ফলন ভালো হয়। তাঁর তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ৩৫ একর জমিতে সাত মেট্রিক টন চিনাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চিনাল চাষে বাড়তি কোনো খরচ নেই।
এই কৃষি কর্মকর্তা জানান, আদিকাল থেকে চাষ হলেও চিনাল এখনো জাতীয় ফলের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কয়েক বছর ধরে ফলটি নিয়ে গবেষণা চলছে।