শেখ হাসিনার মুখে ঘটনার বর্ণনা
বিভীষিকাময় সেই ২১ আগস্টে মুহুর্মুহু গ্রেনেড হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল অনেক মানুষের দেহ। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
মামলার অভিযোগপত্র তৈরির আগে ২০০৮ সালে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর উপকারাগারে গিয়ে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে শেখ হাসিনার সাক্ষ্য নেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারা অনুযায়ী শেখ হাসিনার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়, যা আদালতে দেওয়া নথিতেও সংযুক্ত এবং অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
শেখ হাসিনা জবানবন্দিতে বলেছেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা ও গোপালগঞ্জে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার মুক্তাঙ্গনে একটি প্রতিবাদ শোভাযাত্রা করার জন্য অনুমতি চেয়ে আওয়ামী লীগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আগেই আবেদন করেছিল। কিন্তু ২০ আগস্ট সকাল পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ মুক্তাঙ্গনে শোভাযাত্রা করার অনুমতি না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শোভাযাত্রা করার প্রস্তুতি নেয়।
জবানবন্দিতে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি ধানমন্ডি সুধাসদন থেকে রওনা হন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পৌঁছার পর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকে ওঠেন। ট্রাকের অবস্থান ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুমানিক ১৫-২০ গজ পূর্ব দিকে। তিনি ওই ট্রাকে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। আনুমানিক বিকেল ৫টা ২০ থেকে ২২ মিনিটের দিকে তাঁর বক্তব্য শেষ হয়। এরপর তিনি ট্রাক থেকে নিচে নামার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন; এমন সময় ফটোসাংবাদিক এস এম গোর্কি ছবি তোলার সুযোগ চাইলে শেখ হাসিনা একটু থামেন। ঠিক তখনই, সম্ভবত দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। বিপদ বুঝতে পেরে তিনি এবং ট্রাকের ওপরে থাকা অন্যরা মাথা নিচু করে শুয়ে বা বসে পড়েন। এরই মধ্যে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা মানবঢাল তৈরি করে তাঁকে রক্ষার প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পরে বিস্ফোরণ একটু থামলে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে ট্রাক থেকে নামিয়ে বুলেটপ্রুফ জিপে তোলার চেষ্টা করেন। তিনি জিপের দিকে অগ্রসর হলে আবারও বিস্ফোরণ শুরু হয়। এরপর তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে টেনে ট্রাকে থাকা টেবিলের নিচে নিয়ে যান এবং মানবঢাল তৈরি করেন। একপর্যায়ে তাঁকে বুলেটপ্রুফ জিপে তোলা হয়। এর মধ্যে আবারও বিস্ফোরণ ঘটে। সন্ধ্যা অনুমান ছয়টার সময় তিনি সুধাসদনে পৌঁছান। তিনি পরে জানতে পারেন, ওটা ছিল গ্রেনেড হামলা।
শেখ হাসিনা বলেন, ঘটনার সময় পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির প্রোটেকশন দলের সদস্যরা তাঁদের অস্ত্র থেকে কয়েকটি গুলি ছুড়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও ডিএমপির প্রোটেকশন দল কোনো ভূমিকাই রাখেনি। বরং তিনি ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পর আউটার স্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকের রাস্তা দিয়ে যখন জিরো পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, তখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগান থেকে গুলি করে তাঁদের যাত্রাকে ব্যাহত করে। তিনি বলেন, তাঁর শ্রবণশক্তি লোপ পেয়েছে। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করেও ডান কানের শ্রবণশক্তি স্বাভাবিক হয়নি।