রাতে দল বেঁধে পশুর হাটে ঢুঁ
সরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান পরিবার নিয়ে এসেছেন পুরান ঢাকার কাউয়ারটেক কোরবানির পশুর হাটে। দিনে সময় পান না খুব একটা। রাতে বের হওয়ার সময় সন্তানেরা বায়না ধরেছে হাটে গিয়ে গরু দেখবে। হাবিবুর ভেবে দেখলেন, হাট যাচাইও করা যাবে, পাশাপাশি সন্তানদের আবদারও মেটানো হবে। তাই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গত বুধবার রাতে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
সরাসরি গরু দেখে হাবিবুর রহমানের সন্তানদের সে কী উচ্ছ্বাস! একটি লাল গরু দেখে তারা বায়না ধরেছে, সেটি কিনতে হবে। হাবিবুর তাদের বুঝিয়ে বললেন, ‘সামনে আরও বড়, সুন্দর গরু আছে। সেখান থেকে কিনব।’
রায়সাহেব বাজারের পর থেকে কাঠের পুল এলাকা পর্যন্ত বসেছে এই পশুর হাট।
ব্যস্ততা আর যানজটের এই শহরে অনেকেই দিনের বেলায় হাট যেতে চান না। বেছে নেন রাত। ঢুঁ মারছেন বিভিন্ন হাটে। দাম পরখ করে দেখছেন। তাঁদের কয়েকজন বলেন, রাতে যানজট থাকে না খুব একটা। হাটেও ভিড় কম থাকে। সময় নিয়ে বেছে কোরবানির জন্য পছন্দের পশু কেনার সুযোগ থাকে।
গতকাল বুধবার রাতে ঝিরঝির বৃষ্টি ছিল। এর মধ্যে বংশালের সামসাবাদ মাঠ, ধোলাইখালের কাউয়ারটেক মাঠ এবং ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্রেতাই দাম যাচাই করে দেখছেন। কেউ কেউ পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন।
মোটরসাইকেলে করে পরিবার নিয়ে রাত একটায় সামসাবাদ মাঠসংলগ্ন হাটে এসেছেন সামসুদ্দীন আহমেদ। এ সময় হাট অনেকটা ফাঁকা থাকায় মোটরবাইকে করেই ধীরগতিতে হাট ঘুরে দেখছিলেন তিনি। মাঝেমধ্যে মোটরবাইক থামিয়ে চার বছরের ছেলে মাসুদ রানাকে গরুর কাছে নিয়ে যাচ্ছেন। শিশুটি গরুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর মা সে ছবি মুঠোফোনে ধারণ করে রাখছেন।
অনেককে দেখা গেল দল বেঁধে হাটে হাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনি একটি দল এসেছে ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন হাটে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু টিউশন থাকায় এখনো গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি তাঁরা। তাই সুযোগ করে বন্ধুদের নিয়ে রাতে ঘুরে হাট দেখা আর আড্ডা দিতে এসেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নবাব হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর বাবার সঙ্গে এলাকার হাট থেকে পশু কিনি। এ বছর বাড়ি যেতে দেরি হবে, তাই ঢাকার হাট দেখছি। দিনে প্রচুর গরম ও লোকসমাগম থাকায় রাতে আসা।’
প্রতিটি পশুহাটে রাতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। এ ছাড়া পশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পশুচিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, বিক্রি তত বাড়বে বলে জানান গরুর ব্যাপারী এবং হাটের কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, ক্রেতাদের আগ্রহ মূলত ৪০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা দামের গরুতে। বাড়িতে গরু রাখার জায়গার সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা থাকায় অনেকেই এখন গরু কিনছেন না। তবে কেউ কেউ গরু কিনে তা ব্যবসায়ীদের হেফাজতেই রেখে দিচ্ছেন। ঈদের দু–এক দিন আগে বাড়িতে নিয়ে যাবেন। তবে এর জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।