বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা আমেজে ঈদ শুরু
বৃষ্টিভেজা ভোরকে সঙ্গে করে আজ বুধবার দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ঈদ উৎসব। আকাশ ডাকলেও আজ মন ছুটিতেই ছিল। সেটা হলো ঈদের ছুটি। ধর্মীয় আমেজে উৎসাহ–উদ্দীপনা আর পারিবারিক নানা আয়োজনে দিনটি প্রিয়জনদের সঙ্গে উপভোগ করছেন দেশব্যাপী। সকালে বৃষ্টির মধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতরের জামাত।
কাল চাঁদ দেখা নিয়ে শেষ মুহূর্তের ঘোষণায় এবার ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত ছিল পরিবারগুলো। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোকে ফাঁকা করে দিয়ে ঈদ উদ্যাপনে বাড়ি ফিরে গেছেন অনেক মানুষ। গত কয়েক দিন ছিল জল, স্থল আর আকাশপথে ঘরমুখী মানুষের ঢল। সচ্ছল অনেকে আবার পরিবার নিয়ে ঈদের ছুটি উদ্যাপনে গেছেন দেশের বাইরে। অনেকে দেশের ভেতরেই পর্যটন এলাকাগুলোয় গেছেন ঈদ কাটাতে।
রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত আজ হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত এই প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ নামাজ আদায় করেন।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার উদ্যাপিত হবে ঈদুল ফিতর। ওই সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে থাকে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার খবর। প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজেও অনেক পাঠক ঈদের চাঁদ দেখার খবর জানান। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয় আলোড়ন।
অবশেষে রাত ১১টার দিকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ফের সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন। তিনি জানান, দেশের আকাশে (মঙ্গলবার) চাঁদ দেখা গেছে। বুধবার সারা দেশে ঈদ উদ্যাপিত হবে। অনেকে এর আগে ৩০ রোজা ধরে তারাবির নামাজ আদায় করে ফেলেছিলেন।
আজ রোজা হবে ভেবে ঈদ উপলক্ষে পারিবারিক আয়োজন হিসেবে রান্নাবান্নার কাজ অনেকে তুলে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, সেসব সেরে নেবেন আজ। তবে রাতে ঈদের ঘোষণা আসায় অনেকে রাত জেগে বেশ কিছু খাবার রান্না শেষ করেন।
এবারের ঈদে বৃষ্টির আভাস ছিল আগে থেকেই। কালও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ শহর থেকে গ্রামে ঈদ উদ্যাপন করতে গেছেন। আজ ঈদের আনন্দের শুরুতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে দেশজুড়ে। ছিটেফোঁটা নয়, একেবারে ভারী বৃষ্টি। রাজধানী ঢাকাও বাদ যায়নি বৃষ্টির কবল থেকে।
আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানা গেছে, গতকাল পুরো দিনই বৃষ্টি ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে। বৃষ্টির রেশ রাতভর চলেছে। রাজধানী ঢাকায় আজ সকাল থেকে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার। বৃষ্টির কারণে বিপত্তিতে পড়েছেন মুসল্লিরা। ঈদের প্রধান নামাজ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে মুসল্লিদের ঈদগা ময়দানে হাজির হতে।
একই অবস্থা ছিল ঢাকার অন্যান্য এলাকাতেও। তাই বাধ্য হয়ে ঈদগা ময়দানে নামাজ না পড়ে মসজিদেই ঈদের জামাতে অংশ নিতে হয়েছে সবাইকে।
ঢাকার মতো সারা দেশেই চলছে বৃষ্টির দাপট। আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ঈশ্বরদীতে, যার পরিমাণ ছিল ৪৩ মিলিমিটার।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আজ সারা দিন এবং কাল বৃহস্পতিবার এভাবেই বৃষ্টি হবে দেশজুড়ে।
আবহাওয়া বিদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ উপকূলে আর কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসবে। তবে এর আগে এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে সেটি মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে নয়।
গতকাল আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সারা দেশে বৃষ্টি অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। তবে খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির মাত্রা রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।