ফের উত্তেজনা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে
বকেয়া দুই সপ্তাহের মজুরি চলতি সপ্তাহে পরিশোধের শর্তে খুলনার পাটকলশ্রমিকেরা কাজে ফিরেছিলেন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিনেও মজুরি পাননি তাঁরা। এতে আবারও খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শর্ত ভঙ্গ করায় আজ সব মিলের কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ওই অবরোধ কার্যক্রম চলে। পরে অবশ্য মিলে ফেরেন তাঁরা।
টানা ১৬ দিন কর্মবিরতির পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কয়েকটি মিলের উৎপাদন শুরু করেন শ্রমিকেরা। ওই দিনই খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বৈঠক থেকে ধর্মঘট এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সকাল থেকে সব মিলের উৎপাদন শুরু হয়। তবে শর্তমতো সঠিক সময়ে মজুরি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন শ্রমিকেরা ।
কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈঠকে শ্রমিকনেতাদের এক প্রকার চাপে রেখে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা আদায় করে নিয়েছিল প্রশাসন। সেখানে বিজেএমসি শর্ত দিয়েছিল, শ্রমিকেরা মিলে ফিরে গেলে বকেয়া দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে চলতি সপ্তাহে। বাকি বকেয়া মজুরি দেওয়া হবে সামনের সপ্তাহের মধ্যে। এ ছাড়া কয়েক দিনের মধ্যে মজুরি কমিশনের খাতায় শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকেরা ওই দিনই মিলে ফিরে গিয়ে উৎপাদন শুরু করেন।
তাঁরা বলেন, ওই শর্তের প্রথমটিই ভেঙেছে বিজেএমসি। এর আগে ঢাকায় শ্রম মন্ত্রণালয়ে বিজেএমসির সঙ্গে শ্রমিকদের বৈঠক থেকে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটাও রাখেনি বিজেএমসি। বারবার শর্ত পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকেরা আরও বিক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
খুলনাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে ৭টি ও যশোরে ২টি। এসব মিলে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন। শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রয়েছে ৯ থেকে ১২ সপ্তাহের।
বুধবার মজুরি না দেওয়ায় আজ সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। তবে জেলা প্রশাসক খুলনায় না থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পরেননি তাঁরা। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে এ ব্যাপারে কথা বলে এসেছেন।
বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা ও যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, বুধবার কোনো মজুরি দেওয়া হয়নি। মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনাও হয়নি। এ জন্য শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিলেও মজুরি পাওয়া নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন মজুরি পরিশোধ করার কথা থাকলেও বিজেএমসি ও পাটকলগুলো সে ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সকালে কয়েকটি মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন। পরে মিলের উৎপাদন পুনরায় চালু হলেও দুপুরের দিকে ক্রিসেন্ট, স্টার ও পিপলস খুলনা অঞ্চলের পাটকলের কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন শ্রমিকেরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজেএমসি খুলনা অঞ্চলের সমন্বয়ক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বলা হয়েছিল মজুরি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এই মুহূর্তে বিজেএমসির কাছে কোনো টাকা নেই। তাই মজুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।