মহাসড়ক তো নয় যেন উঠান

রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে ধানমাড়াই। চলছে তিন চাকার যানবাহনও। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গতকাল মিঠাপুকুরের মোসলেমবাজার এলাকায় রংপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
রংপুর ও দিনাজপুরের বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়ম লঙ্ঘন করে চলছে ধানমাড়াই। চলছে তিন চাকার যানবাহনও। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। গতকাল মিঠাপুকুরের মোসলেমবাজার এলাকায় রংপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কে। ছবি: প্রথম আলো

ধান কেটে এনে রাখা হয়েছে মহাসড়কের ওপর। সেখানে কল বসিয়ে চলছে মাড়াই। ধান ও খড় শুকানো চলছে সড়কের ওপর। এ অবস্থা রংপুর-ফুলবাড়ী ও রংপুর-পার্বতীপুর, পার্বতীপুর-মধ্যপাড়া, পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর-দিনাজপুর ও পার্বতীপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের।
যানবাহনের চালক ও সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, আশপাশের বাড়ির লোকজন উঠানের মতো করে মহাসড়ক ব্যবহার করছেন। এভাবে ধান মাড়াই করার কারণে মহাসড়কে যান চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। মাড়াইকারী ব্যক্তিরাও সড়কের ওপর যেখানে–সেখানে যাতায়াত করছেন। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রংপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়ক রংপুর ও ঢাকা থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন ও বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী যাওয়ার প্রধান সড়ক। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গড়ের মাঠ থেকে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭৫ কিলোমিটার। এর প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে চলছে ধানের কাজ।

গতকাল বুধবার সকালে মিঠাপুকুরের গড়ের মাঠ থেকে শুরু হয়ে ফুলবাড়ীর দিকে রশিদপুর, ভবানীপুর, রসুলপুর, তাইয়াপুর, ফকিরের হাট, পাগলারহাট, চেংমারী, মোসলেম বাজার, ছড়ান, শাল্টিরহাট, নাগেরহাট পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, মাঠ থেকে ধান নিয়ে এসে সড়কের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। কোথাও সড়কের একপাশে কল বসিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। কোথাও মহাসড়কের দুই পাশে ধান শুকানো হচ্ছে, কোথাও খড়। এ কারণে সংকুচিত মহাসড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

ফকিরের হাট এলাকায় ফুলবাড়ীগামী ট্রাকচালক রিয়াজুল মিয়া বলেন, এভাবে মাড়াই ও খড় শুকানোয় ট্রাক চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

রসুলপুর এলাকায় মহাসড়কের এক পাশে ধান মাড়াই করছিলেন কিষান-কিষানি। আরেক পাশে এক নারী ধান নেড়ে দিচ্ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কিষানি বলেন, ‘রাস্তাত ধান শুকাইলে তাড়াতাড়ি শুকি যায়। বাড়িত কিছু জায়গা থাকলেও মাটি ভিজা থাকায় ধান শুকা যায় না।’

জানতে চাইলে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে ধানমাড়াইয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এভাবে মহাসড়কে ধান ও খড় শুকানো যানবাহন চলাচলের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।’

এদিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর-মধ্যপাড়া, পার্বতীপুর-ফুলবাড়ী, পার্বতীপুর-দিনাজপুর, পার্বতীপুর-সৈয়দপুর ও পার্বতীপুর-রংপুর মহাসড়কের প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের বিভিন্ন অংশেও চলছে ধানমাড়াই ও শুকানোর কাজ।

এলাকার লোকজন বলেন, এসব এলাকার গ্রামীণ পাকা সড়কেও রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য লাকড়ি, ভুট্টা, মরিচ ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস শুকানো হচ্ছে। এ কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

পার্বতীপুরের হাবড়া এরশাদনগর এলাকায় ধান মাড়াই করছিলেন মশিউর রহমান। তিনি বলেন, বাড়ির আঙিনা ছোট হওয়ায় প্রায় এক একর জমির ধান একসঙ্গে ভাঙানো যায় না। তাই সড়ক ব্যবহার করছেন।

বাসচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ফুলবাড়ী থেকে পার্বতীপুরে পৌঁছাতে কর্তৃপক্ষ তাঁদের একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়। সে সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়। অন্যথায় পরদিন ট্রিপ বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু মহাসড়ক দখলে নিয়ে ধান ও খড় শুকানোয় নির্দিষ্ট গতিতে গাড়ি চালানো যায় না। বিশেষ করে ধানের ভেজা খড়ের ওপর দিয়ে বাস চালানো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এতে সময়ের অপচয় হচ্ছে। হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটতে পারে দুর্ঘটনাও।

জানতে চাইলে পার্বতীপুর উপজেলা প্রকৌশলী শামীম আকতার বলেন, সড়কে ধান শুকানোর জন্য বিভিন্ন সময় স্থানীয় কৃষকদের বাধা দেওয়া হলেও তাঁরা মানছেন না। বিষয়টি নিয়ে মাসিক সভায় তুলে ধরা হয়েছে। সচেতনতামূলক সভা করে সড়ক দখলে না নিতে উদ্বুদ্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহানুল হক বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে ধান শুকানো ঠিক নয়। এ কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। শিগগিরই এসব বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।