যখন যিনি চেয়ারম্যান, তাঁর বাড়িতে চলে কার্যক্রম
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে জমিসহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভবন বিভিন্ন সময়ে যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। এরপর আর ভবন নির্মাণ করা হয়নি। যখন যিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, তখন তাঁর বাড়ি বা বৈঠকখানায় চলে ইউপির কার্যক্রম। এতে বাসিন্দারা প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর দেওয়ানগঞ্জে তিনটি ইউপির কার্যক্রম চলছে জরাজীর্ণ ভবনে।
ইউপি কার্যালয়গুলো সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুরের ১২টির মধ্যে ১৯৯৩ সালে সাপধরী, ১৯৯৬ সালে কুলকান্দি, ২০০৫ সালে বেলগাছা, ২০০৬ সালে নোয়ারপাড়া এবং সর্বশেষ ২০১০ সালে চিনাডুলী ইউপির ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিনাডুলি ইউনিয়নের গুঠাইল এলাকায় চেয়ারম্যানের বাড়ির উঠানে একটি গাছের ডালে চিনাডুলি ইউপির সাইনবোর্ড ঝোলানো। ওই গাছের নিচে একটি ভাঙাচোরা টিনের ঘরে চলছে পরিষদের কার্যক্রম। ঘরের ভেতরে কিছু চেয়ার ও টেবিল ছাড়া তেমন কোনো আসবাব নেই।
নোয়ারপাড়া ইউপির কার্যক্রম চলতে দেখা গেল ইউনিয়নের হারগিলা এলাকায় চেয়ারম্যান বাড়ির উঠানে। চেয়ারম্যান বাড়িতে ঢোকার মুখে একটি খুঁটিতে নোয়ারপাড়া ইউপির সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। সেখানেও একটি টিনের ঘরে কোনোরকমে চলছে পরিষদের কার্যক্রম।
গুঠাইল বাজার এলাকার একটি গলির ভেতর বেলাগাছা ইউপির সাইনবোর্ড ঝুলতে দেখা গেল। গলির ভেতরে একটি ঘরে কোনোরকমে চলছে পরিষদের কার্যক্রম। আর সাপধরী ও কুলকান্দি ইউপির কার্যক্রম চলছে চেয়ারম্যানের বাড়িতে।
দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ী ইউপির কার্যালয়ের জন্য সরকারি জমি থাকলেও নেই কোনো আধুনিক ভবন। আধা পাকা জরাজীর্ণ একটি ভবনে চলছে ইউপির কার্যক্রম। একই অবস্থা উপজেলার চিকাজানী ও পাররামরামপুর ইউপিরও।
ইসলামপুরের পাঁচটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কার্যালয় না থাকায় পরিচয়পত্র, জন্ম–মৃত্যুসনদ, তথ্যকেন্দ্রের সেবা এবং গ্রাম্য আদালতের বিচার পেতে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁদের। আনুষ্ঠানিক কর্মস্থল না থাকায় জরুরি প্রয়োজনেও পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবকে খুঁজে পাওয়া যায় না। গুদামঘর না থাকায় টিআর, জিআর, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সরকারি বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী এলাকায় আনেন না অনেক চেয়ারম্যান। এতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া বহুদূর থেকে এসব ত্রাণসামগ্রী আনতে গিয়ে অতিরিক্ত যাতায়াত খরচ বহন করতে হচ্ছে দরিদ্র লোকজনকে।
চিনাডুলী ইউনিয়নের বামনা গ্রামের রাশেদুল ইসলাম বলেন, ৯ বছর আগে পরিষদের পাকা ভবন নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর যখন যিনি চেয়ারম্যান, তখন তাঁর সুবিধাজনক স্থানে অথবা তাঁর বাড়িতে অস্থায়ীভাবে পরিষদের কার্যক্রম চলে আসছে। ফলে সাধারণ মানুষ পরিষদের অনেক সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। ভবন না থাকায় অস্থায়ী কার্যালয় নিয়মিত খোলাও হয় না। এতে ইউনিয়নের অনেক উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বেলগাছা ইউপির গ্রাম আদালতের সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিষদের কার্যক্রম চলছে একটি জরাজীর্ণ ছোট ঘরে। একসঙ্গে ২০ থেকে ৩০ জন মানুষের বসার মতো জায়গা নেই। একটি ঘরের মধ্যেই চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও আমরা বসি। আদালতের কোনো নথিপত্র থাকে না, প্রায়ই হারিয়ে যায়। নিয়মিত আদালত চালানো যায় না।’
চিনাডুলী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম বলেন, ‘আমার বাড়ির আঙিনার একটি টিনশেড ঘরে চলছে পরিষদের কার্যক্রম। এভাবে সেবা দিতে গিয়ে আমাদেরও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। রুটিনমাফিক কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। এভাবে একটি পরিষদের কার্যক্রম চলতে পারে না। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের চেয়ে আমরাই অনেক বেশি বেকায়দায় রয়েছি।’
বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালেক বলেন, ১৩ বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনেক লেখালেখি এবং ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। তবে তিনি শুনেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে নাকি ভবন হবে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম খান প্রথম আলোকে বলেন, ছোট্ট একটি জরাজীর্ণ আধা পাকা ঘরে পরিষদের কার্যক্রম চলছে। এখানে একসঙ্গে ২০ জন মানুষ বসা এবং বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। কয়েকবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ঘোরাঘুরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।