কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা বন কর্মকর্তা হিসেবে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যোগ দেন নজরুল ইসলাম। এরই মধ্যে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নিজ দপ্তরে চেয়ার-টেবিলে বসে এক দিনের জন্যও দাপ্তরিক কর্ম সম্পাদনের সুযোগ হয়নি তাঁর।
এই দপ্তরের দুই বাগান মালিও উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে দিন শেষ করেন। উপজেলা কমপ্লেক্সে বন বিভাগের জন্য কক্ষ বরাদ্দ না থাকায় তাঁদের এখন ভাসমান অবস্থায় দপ্তরের কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে।
শুধু বন বিভাগই নয়, ভৈরব উপজেলা পরিষদের আওতাভুক্ত ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ এবং ‘পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প’ দপ্তরের জন্যও কক্ষ বরাদ্দ নেই। ফলে এই দুটি প্রকল্পের ৩০ জন কখনো ভাসমান আবার কখনো অন্য দপ্তরের এক কোনে বসে কার্যদিবস পার করতে হচ্ছে। এতে করে দাপ্তরিক কাজে গতি হারাচ্ছে। তিনটি দপ্তরের প্রধানেরা উপজেলা কমপ্লেক্সে এখন ‘সিট ছাড়া কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচিত।
মনে দুঃখ নিয়ে বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ার–টেবিল ছাড়া চাকরি করতে হবে, এমনটা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে, বিশ্রামের প্রয়োজন হলে ইউএনওর সিএ সাহেবের কক্ষে গিয়ে বসতে হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দপ্তরের প্রয়োজনীয় নথিপত্র এখন রাখা হচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগের একটি কক্ষে। চারা রোপণ, উত্তোলন, বনায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এই দপ্তরের কাজ হলেও কোনোটিই হচ্ছে না যথাযথভাবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চারা রোপণের জন্য মসজিদের পেছনে ছোট একটি জায়গা বরাদ্দ আছে। জায়গাটি আগাছায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে।
বন বিভাগের জন্য এতটুকু স্থান না হলেও পল্লী জীবিকায়ন এবং একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের দুই কর্মকর্তাকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) কার্যালয়ের ছোট্ট একটি কক্ষে এখানকার কর্মরতদের সঙ্গে বসতে দেওয়া হয়।
এই নিয়ে ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের শাখা ব্যবস্থাপক মাকসুদা রহমান জানালেন, আলাদা কক্ষ না থাকায় সবচেয়ে সমস্যা হয় নথিপত্র সংরক্ষণ ও মাঠকর্মীদের সঙ্গে সভা করা নিয়ে। সবচেয়ে বিব্রত হতে হয় টয়লেট ব্যবহার নিয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও সঞ্চয় গ্রহণ এই দপ্তরের কাজ। আগে কার্যালয় থাকলেও ২০১১ থেকে দপ্তরটি কক্ষশূন্য হয়ে পড়ে। এই দপ্তরে আছে ১২ জন মাঠকর্মী। ৭২টি সমিতির সদস্য ২ হাজার ৭৩৬ জন। ঋণ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা। আর সঞ্চয় হিসাবে জমা হয়েছে ৬২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।
মাঠকর্মীরা জানালেন, ক্ষুদ্রঋণের কাজ শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অন্যের কক্ষে বসতে হয়। তাঁরা বাড়তি সময় না দিয়ে কক্ষ ছাড়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন।
দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সমবায় সমিতির মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণ দেওয়া পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের কাজ। বর্তমানে এই দপ্তরের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। সদস্য ১ হাজার ৮০০। ঋণ দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাঠকর্মী জানিয়েছেন, কক্ষ না থাকায় দপ্তরের কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। দপ্তরের একজনের সঙ্গে অন্যজনের কথা হচ্ছে কম। একসঙ্গে বসে কোনো কাজের সমন্বয় করা যাচ্ছে না। কক্ষ সমস্যার অজুহাতে কর্মরত ব্যক্তিরা অফিস করেন কম।
পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা জীবন কৃষ্ণ দত্ত এককথায় বললেন, ‘এখন যেখানে ঠাঁই হয়েছে, সেটি হাটবাজারের মতো। হাটবাজারে অবস্থান করে তো আর ভালো কিছু আশা করা যায় না।’
তিনটি দপ্তরের কক্ষ না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে কক্ষের বিপরীতে দপ্তর বেশি। সমস্যা সেখানেই। তবে তিনি জানান, উপজেলা কমপ্লেক্সে ভবন নির্মাণকাজ চলছে। কাজ শেষ হলে দপ্তর তিনটিকে নিজস্ব কক্ষ দেওয়া কঠিন হবে না।