রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার চেয়ে বাদীর সঙ্গে বনানী থানায় গিয়েছিলেন ফারিয়া মাহবুব। দুই বছর পর তিনিই এখন বলছেন, বাদীর অভিযোগ সাজানো। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদকে ফাঁদে ফেলাই ছিল বাদীর উদ্দেশ্য।
ফারিয়া মাহবুব বনানীর রেইনট্রিতে ধর্ষণের অভিযোগে হওয়া মামলার সাক্ষী ও আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদের স্ত্রী। ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় মামলাটি করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তাঁর অভিযোগ, ওই বছরের ২৮ মার্চ জন্মদিনের পার্টির কথা বলে শাফাত ও তাঁর সহযোগী নাইম আশরাফ তাঁকে ও তাঁর বান্ধবীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। আসামিরা তাঁদের মারধর করেন ও অস্ত্র দেখান। ধর্ষণের আগে তাঁদের নেশাজাতীয় মদ পান করান। বাদী থানায় যে মামলা করেন, সেখানে উল্লেখ করেন, থানায় তাঁর সঙ্গে ধর্ষণের শিকার আরেক বন্ধু ছিলেন। সঙ্গে তাঁর খালাতো বোন ফারিয়া মাহবুবও ছিলেন।
ফারিয়া মাহবুব বলছেন, তিনি বাদীর খালাতো বোন নন। আদতে তাঁর বাড়ি ঢাকাতেই নয়। তিনি চট্টগ্রামের মেয়ে, বাড়ি আজকারদিঘির লেনে। বাদী যে সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন, তখন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। ফারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৯ নভেম্বর জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর শাফাত তাঁর সঙ্গে বাদীর মুঠোফোনে চালাচালি হওয়া কিছু বার্তা দেখিয়েছেন। এসব দেখেশুনে তাঁর মনে হয়েছে, বাদীর সঙ্গে আসামির সুসম্পর্ক ছিল। বাদীকে সে রাতে আটকে রাখার ঘটনা ঘটেনি। তিনি আদালতে দেওয়া আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর রেইনট্রিতে যে কক্ষে বাদী ও আসামি ছিলেন, সেই কক্ষে রেস্তোরাঁকর্মী খাবার দিয়ে যান। সে সময় বাদী চাইলে সাহায্য চাইতে পারতেন।
বনানীতে বাদী যখন মামলা করতে যান, তখন সঙ্গে গিয়েছিলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ফারিয়া বলেন, বাদী তাঁকে খুঁজে বের করে কান্নাকাটি করেন। সে কারণে তিনি বাদী ও তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে থানায়ও যান। তবে মামলায় তাঁকে যে বাদীর খালাতো বোন বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানতেন না। তা ছাড়া ২০১৭ সালের ৭ মার্চ শাফাত আহমেদ তাঁকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বাদী ও আসামি দুজনেই জবানবন্দিতে বলেন, মার্চের মাঝামাঝিতে তাঁদের পরিচয়।
এসব বিষয়ে জানতে বাদী ও তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের সাড়া পাওয়া যায়নি। আদালতে তাঁদের পক্ষে লড়ছেন ফারুক আহম্মেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফারিয়া মাহবুব আবার সংসারে ফিরে যেতে চান। সে কারণে এসব কথা বলতে পারেন। তাঁর উচিত আদালতে এসে কথা বলা। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত বাদী তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তাঁরা ন্যায়বিচার চান।
বনানী থানায় মামলা দায়েরের এক মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ওই মামলায় আসামি পাঁচজন। তাঁরা হলেন শাফাত আহমেদ, নাইম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম, সাদমান সাকিফ, মো. বিল্লাল হোসেন ও রহমত আলী। আসামিদের মধ্যে প্রথম দুজন কারাগারে। বাকিরা জামিনে মুক্ত। এ মামলায় সাক্ষীসংখ্যা ৪৫, এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৩ জন। বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ। গত সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদীর বান্ধবী।
এই মামলার ১ নম্বর আসামি শাফাত আহমেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ওই রাতে তাঁরা দুজনেই প্রচুর মদ পান করেছিলেন। সম্পর্ক স্থাপনের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাদী উঠে দাঁড়ান এবং তাঁকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন বলে মনে হয়। আসামি শাফাতের ধারণা জন্মায়, বাদী বিষয়টি ভালোভাবে নেননি এবং তিনি বিপদে পড়তে পারেন। বাদী জরুরি গর্ভনিরোধক পিল খেতে অস্বীকৃতি জানান। বাদীর চিকিৎসক বন্ধুকে তিনি এই দায়িত্ব দেন। কিন্তু তিনি রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি ওই জবানবন্দিতে আরও জানান, ওই দিনের পর বাদী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে সৌরভ, পাপ্পু ও নাদিম তাঁদের উত্তরার শোরুমে এসে দুই লাখ টাকার দুটি ব্রেসলেট নেন। সেটি দিয়ে তিনি বাদীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
বাদীর চিকিৎসক বন্ধু তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তাঁকে মারধর করে ভিডিও করা হয় এবং তাঁকে দিয়ে বলানো হয় যে তাঁর কাছে ইয়াবা আছে। তিনি আর কখনো ইয়াবা সেবন ও কেনাবেচা করবেন না। এভাবে আসামিরা বাদীকে আইপিল খাওয়াতে তাঁকে বাধ্য করেন।