দুখী বিড়ালগুলোর আশ্রয় তাঁরা
বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া ডিসপেনসারির আলমারির তাক, ওষুধের প্যাকেটের ফাঁকে দুপুরের আলসে ঘুমে কেউ কেউ। চেয়ারে বসা ডিসপেনসারির মালিক রফিকুল ইসলামের ঘাড়েও তাদের যাতায়াত।
ডিসপেনসারি দিয়ে ঘরের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল বিছানাসহ সব জায়গাতেই তাদের বিচরণ।
সাবিনা রহমান খাবার হাতে নিয়ে একেকজনের নাম ধরে ডাকছেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা সাবিনার কোলে, ঘাড়ে বসে খাওয়া শুরু করে। এরা বিড়াল। সংখ্যায় ৩২। তারা সাবিনার কাছে তাঁর সন্তানের মতোই।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শেখেরটেক ১০ নম্বরে সাবিনা ও রফিকুল ইসলাম দম্পতির বাসায় গিয়ে ৩২টি বিড়াল দেখা গেল। এগুলো ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি কুকুর-বিড়ালকে নিয়মিত খাবার খাওয়ান সাবিনা।
সাবিনা জানালেন, এদের দেখভালের জন্যই বছরখানেক আগে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন তিনি। এখন দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটে এদের নিয়ে।
৩২টি বিড়ালেরই আলাদা নাম আছে। যেমন—ফ্রিদা, প্লুটো, চকোপকো, স্যাম, স্যামি, সিমন, অবেরিন, জন, সানসা, ক্যাটালন, স্যাডো, সান্ডো, মারগারিটা, মারিয়া, ড্যাভিড, পিকু, ফিঙ্গো, ল্যানস্টার ইত্যাদি।
নামগুলো রেখেছেন সাবিনার মেয়ে সিনথিয়া তানজীম ও তাঁর বন্ধুরা। সিনথিয়া চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করছেন।
সাবিনার নবম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে ইমরান রহমান ও সাবিনার বোন শাহানা রহমানও বিড়ালের দেখভাল করেন।
সাবিনার বাড়িতে বিড়ালের পাশাপাশি কয়েকটি কুকুরেরও বিচরণ আছে।
সাবিনা জানালেন, ৩২টির মধ্যে মাত্র দুটি বিড়াল বিদেশি। এ দুটি একজন উপহার দিয়েছেন। বাকি ৩০টি রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনার শিকার বা কোনো বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া বিড়াল। বাড়িতে আনার পর এদের চিকিৎসা করা হয়। পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতির আওতায় আনা হয়।
সাবিনা বলেন, রাস্তায় এখন ডাস্টবিনের সংখ্যা কমে গেছে। মানুষ খাবার ফেলে দিলেও কুকুর-বিড়ালকে দেয় না। তাই তারা খাবারের অভাবে থাকে। তা ছাড়া তারা সহিংসতারও শিকার হয়।
সাবিনা জানালেন, তাঁর নানি, মা, খালারা বাড়িতে কুকুর, বিড়াল, বানর ও হরিণ পুষতেন।
সাবিনা বিয়ে করেছেন তাঁর খালাতো ভাই রফিকুলকে। ফলে বিয়ের পর কুকুর-বিড়াল পোষা নিয়ে তাঁদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। তবে আত্মীয়দের কারও কারও মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে।
সাবিনা বললেন, তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে উৎসবে পোশাক না কিনে কুকুর-বিড়ালের জন্য খাবার কেনে। বাড়ি নিজেদের হওয়ায় কুকুর-বিড়াল নিয়ে কোনো ঝামেলাও হয় না।
কুকুর-বিড়ালের খাবারের পেছনে অনেক খরচ হয় বলে জানান সাবিনা। এ জন্য তাঁরা ঘরের অন্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করেন। অবশ্য এ নিয়ে তাঁদের কোনো আফসোস নেই। সাবিনা বলেন, রাস্তায় থাকলে কুকুর-বিড়ালগুলো মরে যেত। একটু আশ্রয় পেয়ে তারা অন্তত বেঁচে তো আছে। আর তাদের পেছনে সময় দিয়ে একধরনের প্রশান্তিও মেলে।
সাবিনার মেয়ে সিনথিয়া তানজীম বললেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁদের জীবে দয়া করার ব্যাপারটি শেখানো হয়েছে। এটি শিখলে মানুষ উগ্র হবে না। প্রাণীদের হত্যা করবে না।