উদ্ধার হওয়া জায়গা আবার বেদখল
বিআইডব্লিউটিএর অভিযানে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেলের উদ্ধার হওয়া জায়গা আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরের জায়গায় ট্রাক ও ভ্যানগাড়ির স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। এসব স্ট্যান্ড থেকে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা চাঁদা আদায় করছেন বলে অভিযোগ।
কয়েক সপ্তাহ ধরে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের পাড়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর অংশ হিসেবে লালবাগ থানাধীন ইসলামবাগ, কিল্লার মোড়, শ্মশানঘাট, শহীদনগর, কুড়ারঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় মাসখানেক আগে।
স্থানীয়রা বলেন, উদ্ধার হওয়া নদীর তীরভূমির জায়গাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি না থাকায় এসব জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা অবৈধভাবে ট্রাক, পিকআপ, ভ্যানগাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ গড়ে তুলেছেন। তাঁরা অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর লালবাগ থানাধীন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইসলামবাগ, আলীরঘাট, চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে পলিথিন ও প্লাস্টিকের পণ্য কয়েক শ বস্তায় ভরে রাখা হয়েছে। কিল্লার মোড়, শ্মশানঘাট, কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজ, শহীদনগর বেড়িবাঁধের কুড়ারঘাট ও বালুঘাট এলাকায় ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগাড়ি ও রিকশার গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। এসব অবৈধ যানবাহনের স্ট্যান্ড ও গ্যারেজগুলো থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা চাঁদা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিল্লার মোড় এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, মাসখানেক আগে বিআইডব্লিউটিএ ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ চালায়। এর সপ্তাহখানেক না পেরোতেই ওই জায়গা ফের দখল হয়ে গেছে। সেখানে লবণ কারখানা ও পাশের শ্মশানঘাট এলাকার ট্রাক ও ভ্যানগাড়ি এবং রিকশার গ্যারেজ থেকে চাঁদা নিচ্ছেন লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের নেতা ইসমাইল হোসেন, আনসার মিয়া ও ফারুক হোসেন। ইসলামবাগ আলীরঘাট ও ইসলামবাগ চেয়ারম্যানঘাট এলাকা থেকে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক দানার গুদাম এবং ভ্যানগাড়ি এবং রিকশার গ্যারেজ গড়ে তুলেছেন স্থানীয় শ্রমিক লীগের নেতা বাদশা মিয়া। এ ছাড়া কামরাঙ্গীরচর লোহার ব্রিজসংলগ্ন কুড়ারঘাট ও বালুঘাট এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি, ট্রাক, পিকআপ স্ট্যান্ড গড়ে সেখান থেকে চাঁদা আদায় করছেন ইমরান মিয়া ও জাহিদ হাসানের লোকজন।
কয়েকজন রিকশাচালক বলেন, প্রতি রাতে রিকশা রাখার জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ট্রাকের জন্য প্রতি রাতে ২০০ টাকা করে দিতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আনসার মিয়া বলেন, নদীর জায়গা উদ্ধার করার খালি অবস্থায় পড়ে আছে। তাই সেখানে রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চালকেরা নিজেরাই তাঁদের গাড়ি রাখছে। এখান থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে না। শহীদনগর কুড়ারঘাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান মিয়া বলেন, ‘আগে থেকেই এখানে ট্রাক ও পিকআপের স্ট্যান্ড ছিল। নতুন করে এখানে কোনো স্ট্যান্ড গড়ে উঠে নাই। আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়।’
যোগাযোগ করা হলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ফের বেদখল হয়ে
যাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। আর বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীর তীর বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। যাতে দখলকারীরা নদীর জায়গায় অবৈধ স্থাপনা গড়তে না পারে, সে জন্য নদীর জায়গা সীমানা নির্ধারণ করে সেখানে পিলার স্থাপন করা হবে।