পরিবহনসংকট মেটাতে দ্বিতল বাস
বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা প্রগতি সরণি-রামপুরা-মালিবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত রুটে গণপরিবহন বেশ কম। গত মাসে সেই সংখ্যা আরও কমে যায়। গণপরিবহনসংকটে ওই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় করতে ১৪টি দ্বিতল বাস নামিয়েছে বিআরটিসি।
তবে স্বল্পসংখ্যক গণপরিবহনে যথাযথ সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাঁরা বলেন, আগে উত্তরা থেকে গুলিস্তান হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক এবং উত্তরা-গুলিস্তানের মতিঝিলে তিনটি বেসরকারি পরিবহনের বাস চলাচল করছিল। সুপ্রভাত, ভিক্টর ও গ্রিন ঢাকা নামের বেসরকারি গণপরিবহনগুলোই ছিল যাত্রীদের ভরসা।
গত ১৯ মার্চ সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। এরপর বন্ধ হয়ে যায় সুপ্রভাত পরিবহন। আর উত্তরা থেকে বাহাদুর শাহ পার্কগামী ভিক্টর বাসটিও এখন চলে না। এ দুটি বাদে আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল রুটে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একমাত্র গ্রিন ঢাকা পরিবহনের বাস চলাচল করছে।
যাত্রীরা বলেন, গ্রিন ঢাকা পরিবহনে আবদুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ৬০ টাকা। স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী যাত্রীদের জন্য এই ভাড়া অতিরিক্ত। আবার সবার পক্ষে এত ভাড়া দেওয়া কঠিন। তাই এই সড়কে যাত্রীদের তীব্র গণপরিবহনসংকটে ভুগতে হয়। অনেকে আবার বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা ব্যবহার করেন।
এমন পরিস্থিতিতে গত ২৭ মার্চ বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা প্রগতি সরণি-রামপুরা-মালিবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) নতুন ১০টি দ্বিতল বাস চালু করা হয়েছে। এর প্রায় এক সপ্তাহ পর আরও চারটি বাস যুক্ত হয়। প্রতিটি বাসে ৭০টি করে আসন। বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ৪৫ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিআরটিসির বাস দেখে যাত্রীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে সংখ্যায় এটি খুব কম মনে করছেন যাত্রীরা। একটি বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার পর বাস পাওয়া গেলেও তাতে ভিড় ঠেলে উঠতে হয় এবং অনেক যাত্রীই দাঁড়িয়ে থাকেন।
রিমা আক্তার নামের এক চাকরিজীবী গত বৃহস্পতিবার পল্টন থেকে নতুন বাজারে যাবেন। তিনি বলেন, ‘এই পথে যাতায়াতে আর তেমন বাস নাই। অল্প কয়েক দিন ধরেই বিআরটিসির বাস চলছে। এই বাস চালুর আগে বেশ কয়েক দিন কষ্ট করে গাড়ি বদল করে যাতায়াত করেছি। বিআরটিসির বাসটি ঠিকমতো চালু থাকলে তা মানুষের জন্য সুবিধাজনক হবে।’
নতুন চালু হওয়া বাসে কিছু অনিয়মের কথাও বলেন যাত্রীরা। এই বাস চালুর আগে বলা হয়, বাস থামার নির্ধারিত জায়গা ও কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানো–নামানো হবে না। এই বাস থেকে যাত্রীদের নামার জন্য সুইচ টিপে সংকেতের ব্যবস্থা থাকার কথা। তবে এখনো নতুন কাউন্টার তৈরি করা হয়নি। অনেক জায়গাতেই যাত্রীদের দৌড়ে বাসে উঠতে ও নামতে দেখা যায়। আর বাসের দেয়ালে হাত দিয়ে জোরে শব্দ করেই কন্ডাক্টর বাস থামানোর সংকেত দেন।
আরিফুল হক নামের এক যাত্রী বলেন, ‘বিআরটিসির বাস চালু হয়েছে ঠিকই, তবে তা এখনো পুরোপুরি সেবা দেওয়া শুরু করতে পারেনি। তারা গুছিয়ে কাজ করছে না। টিকিট কাউন্টার বসেনি। ওঠার পরও টিকিটের ব্যবস্থা নেই। ভাড়ার কোনো তালিকা তাঁদের কাছে নেই। সুপ্রভাত বাসের মতোই ভাড়া আদায় করা হয় যাত্রীদের কাছ থেকে।’
বিআরটিসির একটি বাসের কন্ডাক্টর এনামুল হক বলেন, ‘সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা বলা হয়েছে। তবে কেউ কেউ স্বল্প দূরত্বে পাঁচ টাকা দেন। বিমানবন্দর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যাত্রীরা আরও কম ভাড়া দেন।’ ভাড়া নিয়ে এই গণপরিবহনের যাত্রী-কন্ডাক্টরের বাগ্বিতণ্ডাও দেখা যায়।
নতুন চালু করা বাস নিয়ে বিআরটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আলমাছ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবন্দর-মতিঝিল রুটে ১০টি বাস দিয়ে শুরু হলেও এখন ১৪টি চলছে। আরও ৪০টির মতো বাস এই রুটে যোগ করা হবে। যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভারত থেকে আমদানি করা এই বাসের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। আর কাউন্টার বসানোর জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পরামর্শমতো জায়গা নির্ধারণ করা হবে।