যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি বাজারে সরকারি নির্ধারিত ছাড়াও কয়েক গুণ বেশি ইজারা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। এ বাজারে সাধারণ কৃষক ও জনসাধারণ কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। অতিরিক্ত খাজনা দিতে গিয়ে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির অদূরে কপোতাক্ষ নদের তীরে মুক্তিযুদ্ধের পর সাগরদাঁড়ি বাজার গড়ে ওঠে। এটি এখন উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এখানকার পানের বাজার এলাকার মধ্যে প্রসিদ্ধ। প্রতি শনি, সোম ও বুধবার এখানে হাট বসে। প্রতি হাটে ধান, পাট ও তরকারি বিক্রি হয়। বাইরে থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে তরকারি ও পান কিনে নিয়ে যান। এই বাজারে বাঁশবাড়িয়া, চিংড়া, ষুড়িঘাটা, বুড়িহাটি, হাসানপুর, শেখপুরা, কোমরপুর ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সারসা গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন। বাজারে দুই শতাধিক দোকান রয়েছে।
কিন্তু বাজারটিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে খাজনা আদায়কারীরা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন। এতে সাধারণ কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এ বিষয়ে এলাকাবাসী ও সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর গত বছরের নভেম্বর মাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী ইজারাদার কারও কোনো কথা না শুনে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে চলেছেন।
অভিযোগ, হাটের দিন পান প্রতি বান্ডিল ৩ টাকার স্থলে ১০ টাকা, ১ মণ আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, কপি, মরিচসহ অন্য তরকারি ৪ থেকে ৭ টাকার স্থলে ২০ টাকা আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। এ ছাড়া তরকারির স্থায়ী দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
তবে হাটের ইজারাদার সুভাষ দেবনাথ দাবি করেন, তাঁর নামে হাট ইজারা নেওয়া হলেও তিনি ইজারা আদায় করেন না। তিনি অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সম্প্রতি হাটে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ক্রেতা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভিড়ে বাজারটি জমজমাট। কাঁচামাল ব্যবসায়ী মুজিবর সরদার বলেন, মাল কেনার সময় খাজনা দিতে হয়। আবার মাল খুচরা বিক্রি করতে গেলেও খাজনা দিতে হচ্ছে। শেখপুরা গ্রামের আজগার আলীর অভিযোগ, তিনি গাছের চারা বিক্রি করেন। ৬০ টাকায় দুটি চারা বিক্রি করে ৪০ টাকা খাজনা দিয়েছেন। সারসা গ্রামের প্রদীপ সাহা অভিযোগ করেন, কৃষকদের কাছ থেকে তরকারি কিনলে ২০ টাকা নেওয়া হয়। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও ২০ টাকা আদায় করা হয়। সাগরদাঁড়ি গ্রামের গৌরকিশোর নন্দীর অভিযোগ, ১ বান্ডিল পানে সরকার নির্ধারিত ৩ টাকার স্থলে ১০ টাকা খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেন, অল্প পরিমাণ সুপারি, কলা, কচু নিয়ে এলেও খাজনা দিতে হয়। বাজারে কোনো পণ্য তুললেই খাজনা দিতে হয়। বিক্রি না হলেও জোর করে খাজনা আদায় করা হয়।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মালামাল বাইরে নিতে গেলে ১০ টাকা হারে ডেলিভারি খাজনা আদায় করা হয়। এ নিয়ে খাজনা আদায়কারীরা সাধারণ কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অনেক সময় তাঁদের ওপর চড়াও হন। এ কারণে এ বাজারে মালামাল ওঠা কমে যাচ্ছে।
সাগরদাঁড়ি বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত খাজনা আদায় করারা জন্য ইজারাদারকে মৌখিকভাবে বলেছি। তাঁদের লিখিত দিয়েছি। সরকারি তালিকা টানিয়ে দিয়েছি, তরপরও অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে। প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল হচ্ছে না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমান বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করলে ইজারা বাতিল করা হবে। তিনি বলেন, এ বছর আর দুই মাস বাকি আছে। সামনের বছরে ইজারা দেওয়ার পর প্রতিটি বাজারে সরকার নির্ধারিত তালিকা টানিয়ে দেওয়া হবে। অতিরিক্ত খাজনা আদায় করতে দেওয়া হবে না।