নির্যাতনের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে
জামালপুর সদর উপজেলায় ছাগল পেটানোর মামলায় স্বরাজ আলী (৪৩) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে গতকাল শনিবার দুপুরে নির্যাতনের শিকার স্বরাজ আলীর মা চন্দ্রা বানু একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্বরাজ আলী সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের চরশিকান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একজন দরিদ্র রাজমিস্ত্রি।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, ওই লিখিত অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের একদল পুলিশ সদস্য স্বরাজ আলীর বাড়িতে যান। এ সময় তাঁরা স্বরাজকে গ্রেপ্তার করেন। প্রায় একই সময় তাঁর প্রতিবেশী মো. রুকন মিয়া ও দেওলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাইন উদ্দিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁদের তিনজনকেই ওই তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। রুকন ও মাইন উদ্দিনকে একটি কক্ষে এবং স্বরাজকে আরেকটি কক্ষে রাখা হয়। পরে স্বরাজকে নির্যাতন করা হয়। গত মঙ্গলবার সকালে আটককৃতদের আত্মীয়স্বজন ওই তদন্ত কেন্দ্রে গেলেও পুলিশ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। তবে মঙ্গলবার সকালেই ওই তিনজনকে সদর থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় স্বরাজকে থানার লকাপে রাখা হয় এবং অন্য দুজনকে থানার দুই তলার একটি কক্ষে রাখা হয়। স্বরাজ অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার সকালে একটি ছাগল পেটানোকে কেন্দ্র করে এক গর্ভবতী নারীকে মারধরের মামলার আসামি হিসেবে পুলিশ তাঁদের তিনজনকে আদালতে পাঠায়। ওই দিনই তাঁরা আদালত থেকে জামিন পান। এরপর অসুস্থ স্বরাজকে গত বৃহস্পতিবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে আবারও চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলে পুলিশের বিষয়টি শুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করেনি। ফলে দরিদ্র পরিবার তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে রেখেই তাঁকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। গতকাল সকাল থেকে তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত পড়া শুরু করলে তাঁকে বিকেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্বরাজের মা চন্দ্রা বানু বলেন, ‘আমরা খুবই দরিদ্র মানুষ। ছাগল মারার ঘটনার সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সম্পর্ক নেই। এরপরও পুলিশ আমার ছেলেটাকে ধরে নিয়ে অনেক মারধর করেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্নও রয়েছে এবং মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ওইসব পুলিশ সদস্যের শাস্তির দাবি করছি।’
স্বরাজের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া মাইন উদ্দিন বলেন, ‘মো. সেলিম নামের আমার এক আত্মীয়ের স্ত্রী রানী বেগমের সঙ্গে মোমেনা বেগমের ছাগল নিয়ে ঝগড়া হয়। এ ঘটনাটি শুধু নারীদের মধ্যেই ঘটেছিল। আমরা বিষয়টি জানিই না। এরপরও আমাদের আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু স্বরাজকে নারায়ণপুর তদন্ত কেন্দ্রে অন্য একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ে পুলিশ নির্যাতন করেছে। তিনি খুবই অসুস্থ। তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে এবং পায়ে–হাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত করা হলেই সবকিছুই বেরিয়ে আসবে।’
এ ব্যাপারে নারায়ণপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল লতিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ওই আসামিদের তদন্ত কেন্দ্রে আনা হয়েছিল। যথা নিয়মে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতনের কোনো বিষয় ঘটেনি। এরপরও ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবু সায়েমকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন।’ তবে এসআই আবু সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যেভাবে বলেন, সেভাবেই আমাদের কথা শুনতে হয়। ওই দিন আসামি গ্রেপ্তারের সময় লতিফ স্যারও ছিলেন। আমাকে শুধু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাই করা হয়েছে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টিও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাই করেছেন। তাঁকে নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। যথা নিয়মে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাগল নিয়ে ঝগড়া শুরু হলেও ওই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে আসামিরা একজন গর্ভবতী নারীকে মারধরও করেছেন। তবে পুলিশ আসামি ধরবে, যথা নিয়মে আদালতে পাঠাবে। এখানে নির্যাতনের কোনো কারণ থাকার কথা নয়। অভিযোগকারী ছয় দিন পর কেন অভিযোগ করলেন। যা–ই হোক, অভিযোগের তদন্ত করে, সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’