প্রার্থী নেই, ভোটহীন ৩০ উপজেলা

>
  • নিবন্ধিত অনেক দল নির্বাচনে নেই। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের তেমন কিছু করণীয় নেই বলছে ইসি।
  • চার ধাপে মোট ৪৬০ উপজেলায় নির্বাচন, প্রথম দফায় ভোট শেষ
  • দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ ভোট
  • বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হচ্ছেন ১১০ জন

স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অতীতে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেলেও এবারের উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে নিরুত্তাপ পরিবেশে। চার ধাপে হওয়া ৪৬০টি উপজেলার মধ্যে ২৪ শতাংশ উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন বিনা ভোটে। কোনো পদেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ভোটহীন হয়ে পড়েছে ৩০ উপজেলা।

জানা গেছে, প্রথম দফায় ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৭৮টিতে। ৬টিতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আর বাকি তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোট করার প্রয়োজন পড়েনি। পরবর্তী তিন ধাপে হতে যাওয়া ৩৭৩টি উপজেলার মধ্যে ২৭টি উপজেলায় কোনো পদেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই এসব উপজেলায় ভোট করতে হবে না নির্বাচন কমিশনকে। ৮০টি উপজেলায় শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্য ভোট আয়োজন করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধিত অনেকগুলো দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। তাই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কম। এ ক্ষেত্রে কমিশনের তেমন কিছু করণীয় নেই। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, অনেক দল অংশ না নেওয়ায় তাদের সমর্থকেরাও ভোটে আগ্রহী হচ্ছেন না। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোট পড়ার হার কম। যেসব উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন, সেখানে ভোটের হার ১৩ থেকে ৩০ শতাংশ।

জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৭ ধাপে ৪৭৪টি উপজেলায় নির্বাচন হয়। তখন প্রতিটি উপজেলায় একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রতিযোগিতা ছিল লক্ষণীয়। গড়ে ভোটের হার ছিল ৬০ শতাংশের বেশি। তবে এবার বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলোসহ বেশ কিছু দল নির্বাচন বর্জন করায় কমে গেছে প্রার্থীর সংখ্যা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কম। ফলে ভোটারদের মধ্যেও তেমন উৎসাহ নেই। এবার প্রথম ধাপে ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে। একাদশ সংসদ
নির্বাচনের পর ভোটের ওপর অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
তবে এ বিষয়ে একমত নন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সব সময় নির্বাচনকে উৎসবের চোখেই দেখে। উপজেলা নির্বাচনে অন্য দলগুলো অংশ না নেওয়ায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। শক্ত প্রতিপক্ষ থাকলে ভোটারদের আগ্রহ বেশি থাকে।

প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় প্রথম ধাপে নাটোর সদর, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ ভোট প্রয়োজন হয়নি। পরের তিন ধাপের মধ্যে ভোট হচ্ছে না ভোলা সদর, মনপুরা ও চরফ্যাশন, বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, যশোরের শার্শা, কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম ও দেবীদ্বার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, নওগাঁ সদর, পাবনা সদর, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুর সদর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার, নরসিংদীর পলাশ, নোয়াখালীর হাতিয়া ও কোম্পানীগঞ্জ, ফেনীর পরশুরাম, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাউজান ও মিরসরাই এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন বাতিল হওয়া এক প্রার্থী উচ্চ আদালতে রিট করায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রতি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা (সংরক্ষিত) ভাইস চেয়ারম্যান ভোটে নির্বাচিত হওয়ার কথা। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১৫ জন চেয়ারম্যানসহ ৩১ প্রার্থী জয় পেয়েছেন ভোট ছাড়া। দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ২৫, তৃতীয় ধাপে ৩০ ও চতুর্থ ধাপে ৪০ জন নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হচ্ছেন ভোট ছাড়াই। এ তিন ধাপ মিলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে শতাধিক প্রার্থী জয় পেতে পারেন। এতে করে ৪ ধাপ মিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা ২ শতাধিক ছাড়িয়ে যাবে। কোনো কোনো উপজেলায় তিনটি পদের মধ্যে শুধু একটি পদে নির্বাচন হবে। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ও নোয়াখালীর চাটখিলে শুধু মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, সুবর্ণচরে শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হতে যাচ্ছে। আবার ফেনীর ছয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হচ্ছে না। এর মধ্যে চারটিতে শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদে ও সদরে শুধু চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াই হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের লড়াই থেকে এ দেশের জন্ম হয়েছে। নির্বাচনের জন্য এ দেশের মানুষ মরিয়া হয়ে যায়, হানাহানি হয়। অথচ এখন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঢেউ উঠেছে। এবারের উপজেলা নির্বাচনের চিত্র একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। নির্বাচনে উৎসাহ ফিরিয়ে আনারও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের সামগ্রিক অনাস্থা, হতাশা থেকেই এমন হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।