উপজেলা নির্বাচন
ব্যালট ছিনতাই, হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যই প্রথম ধাপের ভোট শেষ, অপেক্ষা ফলাফলের
ব্যালট পেপার ছিনতাই, ভোট স্থগিত, প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৮ উপজেলায় আজ রোববার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে গণনা। গণনা শেষে ফল প্রকাশ করবেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে একটানা বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে।
এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও জাতীয় নির্বাচনের দুই মাসের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো নির্বাচন বর্জনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। এ জন্য এবারের নির্বাচন হচ্ছে অনেকটা একতরফা। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যাঁরা আওয়ামী লীগেরই নেতা। আর বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের এই ৭৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৪৯ জন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত
জামালগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন তিনজন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আল আজাদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা মু. রশীদ আহমদ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনে সরকারদলীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং সংরক্ষিত আসনের সাংসদ শামীমা আক্তার খানমের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ দেন। ইসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার বলেন, জামালগঞ্জে এক প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সাংসদ প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। হয়তো এ কারণেই ওই উপজেলা নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
নেত্রকোনার পূর্বধলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের জাহিদুল ইসলাম ও দলীয় বিদ্রোহী মাছুদ আলম তালুকদার। জাহিদুল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আর মাছুদ আলম তালুকদার উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে দুই প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় মামলা ও লিখিত অভিযোগ করেছে। গত রোববার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে হিরণপুর বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন এবং ওই থানার ওসি বিল্লাল উদ্দিন পছন্দের প্রার্থী মাছুদ আলম তালুকদারের পক্ষে অবস্থান নেন। এর মধ্যে সাংসদ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে সরাসরি নির্বাচনী প্রচারে নামেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় ইসি। তিনি এলাকা ছাড়লেও পরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আবারও ফিরে আসেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের নির্দেশে থানার ওসি বিল্লাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়।
নেত্রকোনা জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মুতাহসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্বধলায় নির্বাচন ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী পরিচালনা সম্ভব নয় বলে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখার জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
গত শুক্রবার লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার রাতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় মামলা হয়েছে। এ ছাড়া পাটগ্রামের ওসি আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেনকে শুক্রবার রাতে পাটগ্রাম থেকে বদলি করা হয়েছে।
আদালতের নির্দেশে স্থগিত তিন উপজেলার ভোট
আদালতের নির্দেশে নীলফামারীর জলঢাকা ও সদর উপজেলা এবং রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদে আজ ভোট হচ্ছে না। নীলফামারীর জলঢাকা ও সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করে শুক্রবার রাতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জে উচ্চ আদালতে পৃথক দুটি রিট হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে ওই দুই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১০ মার্চের নির্বাচন স্থগিত করা হলো।
কুড়িগ্রামে ৬ কেন্দ্রের ভোট স্থগিত
ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে কুড়িগ্রামের সদর, উলিপুর, রৌমারী, চিলমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার ছয়টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রগুলো হচ্ছে উলিপুর উপজেলার হোকোডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মদিনাতুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা, নাগেশ্বরী উপজেলার কুটি নাওডাঙ্গা ফোরকানিয়া ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, সদর উপজেলার শিবরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রৌমারী উপজেলার ধনারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চিলমারী উপজেলার খালেদা শওকত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভোটকেন্দ্রগুলোয় সেভাবে ভোটারের উপস্থিতি নেই। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অনেক কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্টও পাওয়া যায়নি। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া অন্যত্র শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। তবে হাফিজুর রহমান স্বীকার করেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পরও ভোটার উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়।
সুনামগঞ্জে তিন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত
প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি ও ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে সুনামগঞ্জের শাল্লা ও ধরমপাশা উপজেলার তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ধরমপাশা উপজেলার দুগনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরিষাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শাল্লা উপজেলার কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা। সেখানে নৌকা প্রতীকে আল আমিন চৌধুরী এবং আনারস প্রতীকে অবনীল মোহন দাস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অভিযোগ ওঠে, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নৌকার সমর্থকেরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন আনারস প্রতীকের সমর্থকেরা। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মুক্তাদীর হোসেন এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ব্যালট পেপার পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ কারণে ভোট নেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৯৩৬। তবে স্থগিত হওয়ার আগে কত ভোট গ্রহণ হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দেননি।
একই উপজেলার দামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ভোট দিতে না দেওয়ার অভিযোগ করেন।
সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের দুগনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আজ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ভোট গ্রহণ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীম আহমেদ মুরাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাম্মেল হোসেন রোকন—এই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের বারান্দার খানিকটা সামনে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকা দুই পক্ষের এজেন্টরাও এতে জড়িয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উপজেলার দুগনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. যোবায়ের হাসান বলেন, সকাল আটটা থেকে এই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতি শুরু হলে থানার দুজন পুলিশ ও আনসার ভিডিপির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুগনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণ আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। ওই কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে ধরমপাশা উপজেলার সরিষাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার নিয়ে কয়েকজন ভোটারের টানাটানির ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একটি বুথে দুই-তিনজন ভোটার একে অপরের ব্যালট পেপার নিয়ে টানাটানি শুরু করেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
‘রাতে ব্যালটে সিল মারছিলেন তাঁরা’
ভোট গ্রহণের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। পরে কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়।
রোববার সকাল আটটা থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৮টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা। সিরাজগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘রাতের বেলা খবর পেলাম যে এই কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে। তারপর সেখানে যাই। গিয়ে ব্যালট চোখে পড়ে। এসব অনিয়মে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও তাঁর দুই সহকারীর জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। পরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন আর সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল আলিম ও বেলাল হোসেনকে আটক করা হয়।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘গতকাল রাতে ব্যালটে সিল মারতে শুরু করেন সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। তাঁদের আটক করা হয়েছে। কেন্দ্রটিতে ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
কেন্দ্র দখল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্য দিয়ে আজ রোববার নাটোরে পাঁচটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন দুজন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সকালের দিকে কিছু কেন্দ্রে কম ভোটার দেখা গেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাগাতিপাড়া উপজেলার জিগরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরুর সময় বেশ কিছু ভোটার ছিল। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ওই কেন্দ্রের সামনে নৌকা ও আনারস প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় দুজন আহত হন। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাগাতিপাড়ায় নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী নাটোর-১ আসনের সাংসদ শহীদুল ইসলামের ছোট ভাই অহিদুল ইসলাম। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রটি এখন প্রায় ভোটারশূন্য। বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, তাঁরা কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন। সকাল নয়টার দিকে বাগাতিপাড়ার নুরপুর মালঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সোয়া নয়টার দিকে তমালতলা মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে কম ভোটার চোখে পড়ে।
ভোট শুরুর আগে থেকেই সিংড়া উপজেলায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চলছিল। আজ সকালেও সেই উত্তেজনা দেখা গেছে সেখানে। বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা সিংড়া মহিলা কলেজ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম। এখানে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন আদেশ আলী সরদার। উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক আদেশ আলী ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সাংসদ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলার দ্বারিকুশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বড়াইগ্রাম উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন।
এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও জাতীয় নির্বাচনের দুই মাসের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এ কারণে এবারের নির্বাচন হচ্ছে অনেকটা একতরফা। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের ১৫টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী, যাঁরা আওয়ামী লীগেরই নেতা। আর বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও দলটির স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
এবার সারা দেশে পাঁচটি ধাপে ৪৮০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইসি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে। নাটোর সদর এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সেখানে ভোট হচ্ছে না। আর তিনটি উপজেলার (নীলফামারীর সদর ও জলঢাকা এবং রাজশাহীর পবা) ভোট আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়েছে। এই নয়টি উপজেলায় আজ ভোট হচ্ছে না। বাকি ৭৮টি উপজেলা পরিষদে আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের এই ৭৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৪৯ জন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবার সারা দেশে পাঁচটি ধাপে ৪৮০টি উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে ইসি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভোট স্থগিত করেছে। নাটোর সদর এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সেখানে ভোট হচ্ছে না। আর তিনটি উপজেলার (নীলফামারীর সদর ও জলঢাকা এবং রাজশাহীর পবা) ভোট আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়েছে। এই নয়টি উপজেলায় আজ ভোট হচ্ছে না। বাকি ৭৮টি উপজেলা পরিষদে আজ ভোট নেওয়া হচ্ছে।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ধাপের এই ৭৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৪৯ জন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।