ফরিদপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এই অভিযোগ করেন।
ওই দুই প্রার্থী হলেন সদরপুর উপজেলার শায়েদীদ গামাল এবং চরভদ্রাসনের মো. কাওসার।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও সাংসদ মজিবুর বিভিন্ন সামাজিক ও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তিনি এসব অনুষ্ঠানে তাঁর সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা-২০১৬-এর ২ (১৪) ও ২৫ নম্বর ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ধারা অনুযায়ী কোনো সাংসদই তাঁর নির্বাচনী এলাকায় কোনো প্রকল্পের অনুমোদন ঘোষণা বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কিংবা ফলক উন্মোচন করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সাংসদ একের পর এক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সাংসদ তাঁর মুঠোফোনে তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তাঁর পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এমনকি তিনি অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাত করার চেষ্টা করছেন। সাংসদের এসব কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করবে।
সদরপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শায়েদীদ গামাল জানান, গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি সাংসদ সদরপুর উপজেলায় তাঁর সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুর রহমান হাওলাদার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুজ্জামান, সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ফকির আবদুস সাত্তার, সদরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আনিসুর রহমান খান প্রমুখ।
ওই সংবাদ সম্মেলনে ২ থেকে ৬ মার্চ সাংসদের সফরসূচি তুলে ধরা হয়। সেখানে উল্লেখ রয়েছে শনিবার বেলা ১১টায় ভাঙ্গার মনসুরাবাদ উচ্চবিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে যোগদান, রোববার সকাল ৮টায় তুজারপুর ইউনিয়নে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সোমবার দুপুরে শুলিনা বাজার থেকে আড়িয়াকান্দি বাজার সড়ক পর্যন্ত ১৫ মিটার আরসিসি সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় সদরপুরের আকটের চর এসসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবনের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সন্ধ্যা ৬টায় ঢেউখালী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে সাংসদ মজিবুরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর সহকারী একান্ত সচিব খায়রুল বাসার বলেন, সাংসদ শনিবার ভাঙ্গায় একটি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও একটি জানাজার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি কোথাও নির্বাচনী কোনো বক্তব্য দেননি। মনসুরাবাদ স্কুলে একটি ডোবা ভরাট ও একটি নতুন ভবন করার দাবির ব্যাপারে ভবিষ্যতে করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো ও টাকার প্রলোভনের অভিযোগের ব্যাপারে খায়রুল বাসার বলেন, এখন ডিজিটাল যুগ। মুঠোফোনের সব কথারই রেকর্ড বের করা সম্ভব। সাংসদের মুঠোফোনের কললিস্ট চেক করলেই বোঝা যাবে এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রোকসানা রহমান বলেন, ‘সাংসদের আচরণবিধি লঙ্ঘন-সম্পর্কিত একটি লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে সাংসদকে সতর্ক করা হয়েছে।’